ইন্টারনেট আসক্তি থেকে বই পড়ার অভ্যাস
প্রায় দেড় দশক আগেও স্কুল-কলেজে আবশ্যিকভাবে বাংলা ও ইংরেজি বিষয় ছাড়াও অন্যান্য বিষয়েও শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বই পড়তে বলতেন শিক্ষকরা, যাকে ‘রিডিং পড়া’ বলা হতো। আজ আর এটা তেমন লক্ষ করা যায় না। মনে আছে, আমাকে আমার প্রিয় একজন শিক্ষক চতুর্থ শ্রেণিতে বাংলা রিডিং পড়তে দিয়ে মাথার উপর বেত উঁচু করে ধরে রেখেছিলেন। একটি উচ্চারণে ভুল করেছি তো বেতের এক ঘা থেকে রেহাই পাইনি। আমার বিশ্বাস, তখনকার শহর-গ্রামের প্রায় সব শিক্ষার্থীই এমন অবস্থার শিকার হয়েছে। আর এ কারণেই আমাদের বই পড়ার প্রতি বেশি আগ্রহ তৈরি হয়েছিল।
আজকাল এমনটি আর দেখা যায় না। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বলি, কিংবা এসডিজি-২০৩০-এর শিক্ষণ-শিখন ফলের কথা বলি, সেগুলো কার্যকরভাবে সফল করতে শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশি বেশি বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। সাদা কাগজে কালো অক্ষরে লেখা বই স্বচক্ষে পড়ে যে জ্ঞানের গভীরতা উপভোগ করা যায়, তা ইন্টারনেটনির্ভর ঝাপসা আলোকচ্ছটার লেখা পড়ে কতটুকু অর্জন করা যায়, তা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। ইন্টারভিত্তিক পড়াশোনায় জ্ঞানার্জন থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রভাব বেশি লক্ষণীয়। এতে পাঠককে ভিন্নদিকে পরিচালিত করার আশঙ্কা থাকে। ডিজিটাল টেকনোলজির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পড়ার ইচ্ছা কমিয়ে দেয়। ইন্টারনেট আসক্তি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার বিষয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন করে তুলছে। শুধু তা-ই নয়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিঃসঙ্গতা-একাকিত্বের অনুভূতিও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড লার্নিং জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। যুক্তরাজ্যের সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ফিল রিড বলেছেন, যেসব শিক্ষার্থীর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের অতিরিক্ত নেশা আছে, তারা পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলার তীব্র ঝুঁকিতে রয়েছেন। ইন্টারনেট আসক্ত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্সও খুবই দুর্বল। একাডেমিক ফলাফল বিবেচনায় দেখা যায়, ইন্টারনেট আসক্তরা শিক্ষাগত যোগ্যতার মানে পিছিয়ে থাকছে।