
কোন দেশের সঙ্গে কী স্বার্থ বাংলাদেশের
বর্তমানে সব দেশই কোনো না কোনোভাবে অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল। কেউ রাজনৈতিক, কেউবা অর্থনৈতিকভাবে। বাংলাদেশ যেহেতু মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে উঠছে এবং এই দেশ কোনো খাতেই প্রায় স্বাবলম্বী নয়, তাই আমাদের নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। রাজনৈতিকভাবে সরকারের অনেক বন্ধু রাষ্ট্র থাকলেও আমি এই লেখাতে আমরা অর্থনৈতিকভাবে কোন কোন দেশের ওপর নির্ভরশীল, তা দেখানোর চেষ্টা করব।
এ লেখার জন্য উপাত্ত খুঁজতে গিয়ে আমি সবচেয়ে বেশি যে সমস্যায় পড়েছি, তা সরকারি বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে তথ্য-উপাত্তের মিল না থাকা। আমাদের দেশ ডিজিটাল থেকে স্মার্ট হতে যাচ্ছে, কিন্তু নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব চরম দৃষ্টিকটু।
প্রথমেই দেখি, আমাদের বিনিয়োগে কোন দেশ সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। ২০২২ সালের ৪ আগস্ট মার্কিন দূতাবাস ঢাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের এফআইডি ম্যানেজম্যান্ট সেল এবং পরিসংখ্যান বিভাগের বরাত দিয়ে একটা পোস্ট করে। যেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের বিনিয়োগকারী এক নম্বর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দুই নম্বরে আছে যুক্তরাজ্য। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রকাশিত ২০২২ সালের ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট স্টেটমেন্টের বাংলাদেশ অংশেও একই রকম কথা লেখা আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ সারা দেশের ২০ শতাংশের মতো। তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছে চীন। যুক্তরাষ্ট্র এখানে ইউনাইটেড নেশন্স কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ডেটাও ব্যবহার করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ দূতাবাস ওয়াশিংটনের ওয়েবসাইটে যুক্তরাষ্ট্রকে দ্বিতীয় বিনিয়োগকারী বলে, প্রথম বলা হয়েছে যুক্তরাজ্যকে। এখানেই কথা শেষ হয়ে গেলে কথা ছিল। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি (বিডা) ২০২২ সালের ১৫ জুন বলেছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে শীর্ষ বিনিয়োগকারী চীন। তারা সম্ভবত প্রস্তাবনাগুলোকেও বিনিয়োগের মধ্যে নিয়ে এসেছে। এ ব্যাপারে আশা করি ভবিষ্যতে আরও তথ্য পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশের ইকোনমিক রিলেশন ডিভিশনের ওয়েবসাইট অনুসারে, স্বাধীনতার পর ২০২০-২১ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র হিসেবে সবচেয়ে বেশি অনুদান দিয়েছে জাপান। এরপরই আসে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য, যদিও যৌথ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মিলিত অনুদান সবচেয়ে বেশি। ভারতের অনুদান থাকলেও চীন-রাশিয়ার অবস্থান এখানে গৌণ। (আমি এখানে শুধু দেশের কথা আলোচনা করছি, আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থানের জন্য অনেক সংগঠনেরও অবদান আছে। যেমন এডিবি, ইউএন, আইডিএ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ইত্যাদি)। যখন ঋণের কথা আসে, এই অবস্থান বদল হয়ে যায়। ঋণ দেওয়াতে জাপানের পর পর্যায়ক্রমে আসে রাশিয়া, চীন, ভারতের কথা। যে টাকা বাংলাদেশে এসেছে, সেই হিসাব নিয়ে এই ডেটা। প্রতিজ্ঞা করা ঋণ দেশে এলে চীন আরও এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ শোধ করা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। এখানে জাপান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের লোনের শর্ত সহজ হলেও চীন, রাশিয়া বা ভারতের ঋণের শর্ত বেশ কঠিন (প্রথম আলো, আগস্ট ১, ২০২২)। আর তাদের বেশির ভাগ ঋণ বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে ব্যবহার হওয়ায় সরকারের ক্যাপাসিটি চার্জও টানতে হবে। আবার এ ঋণ করা প্রজেক্টগুলোর ম্যাটেরিয়াল এবং মানবসম্পদও সেই সেই দেশ থেকে আনতে হয়, যে কারণে ওই সব দেশের ব্যবসাও হয়, কিন্তু আমাদের নিজেদেরও সক্ষমতা তৈরি হয় না। নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির কোনো ধারা বেশির ভাগ চুক্তি বা টেন্ডারে থাকে অনুপস্থিত। এর মধ্যে জাপান তাদের প্রজেক্টে কম খরচে করে সেই টাকা ফেরত দিলেও বাকিদের প্রজেক্টগুলোর সময় বেশি লাগে, প্রাক্কলিত ব্যয়ের থেকে খরচও অনেক বেশি হয়।