জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া 'রাষ্ট্র মেরামত' অসম্ভব
রাজধানী ঢাকায় ২০১৮ সালের জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের 'নিরাপদ সড়ক চাই' আন্দোলনের সময় একটি স্লোগান বেশ সাড়া জাগিয়েছিল- 'রাষ্ট্র মেরামতের কাজ চলছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত।' শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিকেই রাষ্ট্র মেরামতের কাজ বলে অভিহিত করেছিল। সম্ভবত তাদের কচি মনে এ ধারণা জন্মেছিল- আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রটি ঠিকমতো কাজ করছে না। তাই এর মেরামত দরকার। শিক্ষার্থীদের মনে উদিত হওয়া ভাবনা এক ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার ত্রুটিগুলো হরহামেশা চোখে পড়ে। তা নিয়ে এদিক-সেদিক আলোচনাও হয়। কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। এর প্রধান কারণ রাষ্ট্র পরিচালনার যারা নিয়ামক, সেই রাজনৈতিক শক্তি এর প্রয়োজন বোধ করে না।
গত ১৯ ডিসেম্বর হঠাৎ বিএনপি ২৭ দফা রাষ্ট্র সংস্কার কর্মসূচি উপস্থাপন করেছে, যেটাকে তারা অভিহিত করছে 'রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা' নামে। বিএনপির এই রাষ্ট্র মেরামত-ফর্মুলা রাজনীতি বেশ আলোচিত হচ্ছে। কারণ, এত দিন তারা সরকার পতন এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের এক দফার আন্দোলনে ছিল। এর পর গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে তারা ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। ওই ঘোষণার ৯ দিনের মাথায় তারা ঘোষণা করল তাদের ভাষায় 'রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা'। ফলে প্রশ্ন উঠতেই পারে- বিএনপির আসল কর্মসূচি কোনটি? এক দফা, ১০ দফা, নাকি ২৭ দফা? তা ছাড়া এই রূপরেখা নিয়ে আরও একটি ধন্দ তৈরি হয়েছে- এটি কি তাদের কর্মসূচি, নাকি দাবিনামা? দাবিনামা হয়ে থাকলে কাদের কাছে তারা দাবি জানাচ্ছে? যে সরকারের পতন ঘটিয়ে নিজেরা ক্ষমতায় গিয়ে রাষ্ট্র মেরামতের স্বপ্ন দেখছে, তাদের কাছে দাবি জানাচ্ছে কোন যুক্তিতে? আর যদি কর্মসূচি হয়ে থাকে তাহলে এটি বাস্তবায়নে তাদের পাড়ি দিতে হবে ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ এক সমুদ্র। প্রথমে জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকারে যেতে হবে। তারপর সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। বর্তমান বাস্তবতায় তা কতটুকু সম্ভব, ভেবে দেখার বিষয়।