বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী দিবস হোক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রকাশ
১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে পত্র লিখলেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে। অন্যদিকে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধবিরতিসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব উত্থাপন করল। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ তখন এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যে হয়তো কয়েক দিনের মধ্যেই সারা বাংলাদেশের আকাশে সবুজের মাঝে লাল সূর্যের পতাকাটি পতপত করে উড়বে।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের চক্রান্তকে প্রতিহত করতে এগিয়ে এলো আমাদের আরেক বন্ধু রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন। নিরাপত্তা পরিষদে দেশটি ভেটো প্রয়োগ করল। পাকিস্তানের হীন উদ্দেশ্য আর চরিতার্থ করা হলো না।
এই ব্যর্থতা ঢাকতে যুক্তরাষ্ট্র অন্য পথ বেছে নিল। পাকিস্তানের পক্ষে এবার সে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একই ধরনের প্রস্তাব উত্থাপন করল। ভোটাভুটিতে পাকিস্তান ১০৪ ভোট পেল এবং বিপক্ষে পড়ল মাত্র ১১ ভোট। যেহেতু সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত কোনো রাষ্ট্র মেনে নিতে বাধ্য নয়, তাই ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের নেতারা ওই সিদ্ধান্তকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল, সামনে একটা পথই খোলা ছিল, দেশকে যত দ্রুত সম্ভব পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দখল থেকে মুক্ত করা। যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের ওই ষড়যন্ত্র স্বাধীনতার জন্য আমাদের চলমান যুদ্ধকে আরো তীব্রতর করে তোলে। তখন প্রতিদিনই বাংলাদেশের কোনো না কোনো এলাকা থেকে পাকিস্তানি সেনারা রাতের আঁধারে পলায়ন শুরু করে দিয়েছে। অর্থাৎ আমেরিকার শত চেষ্টায়ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মাধ্যমে আলাপ-আলোচনায় যাওয়ার আর কোনো অবকাশ পায়নি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক
- মৈত্রী