মাছের বিনিময়ে মাদক ও চিনি বেশি দিয়ে চা
সেদিন সকালে টিভিতে চোখ রেখে চায়ে চুমুক দিচ্ছিলাম। এমন সময় পত্রিকাওয়ালা বারান্দায় পত্রিকা ছুড়ে দিয়ে কলিংবেল টিপে দ্রুত চলে গেলো। আমি একাই নিচে থাকায় চায়ের কাপ হাতে পত্রিকাটি কুড়িয়ে নিয়ে সোফার টেবিলে রাখতেই একটি শিরোনামের দিকে চোখ আটকিয়ে গেলো। তা হলো- ‘মাদকের জন্য সীমান্তে ছুটোছুটি’।
ভাবলাম হয়তো পুলিশের ভয়ে মাদকসেবীরা ছুটে পালাচ্ছে- এমন বিষয়। লেখাটির ভেতরে কি আছে তা জানার জন্য আগ্রহী হলাম। পড়ার চশমাটা নাকে টেনে দিয়ে এক নিঃশ্বাসে প্রথম পাতার লেখাগুলো পড়ে ফেললাম। ভেতরের পাতায় যাওয়ার আগে বোঝা গেলো পরিবেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করে দ্রুত পারিবারিক ও সামাজিক ভাঙন সৃষ্টি করার প্রধান বাহক হচ্ছে অবাধে মাদকের অনুপ্রবেশ ও সেগুলোর যথেচ্ছ ব্যবহার।
নানা কথা ভাবতে ভাবতে ভেতরের পাতায় চোখ বুলাতে লাগলাম। প্রথমে মনে করেছিলাম বর্তমানে মাদকের বিষয়টি তো কক্সবাজার বা টেকনাফের নাফ নদীর সীমান্ত পথে বা নদীতে অথবা বেনাপোল বা সাতক্ষীরা এলাকায় পাচারকারীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ বা ফলোআপের ব্যাপার। কিন্তু নয়। ঘটনাটি উত্তরের শান্ত জেলা দিনাজপুরের সীমান্ত এলাকার।
এই জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে মাদকসেবী ভয়ানক রকম বেড়ে গেছে। তারা প্রতিদিন সূর্য ডোবার জন্য হা করে থাকে। অন্ধকার নামলেই মাদক সেবনের জন্য চলে যায় চেনা গন্তব্যে। মাদক চালানের অনুপ্রবেশ, সংগ্রহ, মজুত, ব্যবসা, বিক্রি, ভোগ, অসুস্থতা, চিকিৎসা, সামাজিক ও পারিবারিক অস্থিরতা সবকিছুতেই কোথায় জানি একটা অদেখা ছন্দ বিরাজমান। সেটা হলো- সব পর্যায়ে সব বেনিফিসিয়ারিরা বলেন, এটা খারাপ কাজ। আমরা এর বিরুদ্ধে প্রচেষ্টা চালাই। কিন্তু কার্যত তাদের সিংহভাগই নির্দিষ্ট ছন্দ মেনে সন্তর্পণে মাদকের পক্ষেই কাজ করেন- নিজেদের অবৈধ বখরা প্রাপ্তি বা লাভের আশায়।
তারা সবকিছু অস্বীকার করলেও তারাই মাদকের শিকারি। সংকেতধারী, টর্চধারী, হুইসেলধারী, লাঠিয়াল, বন্দুকধারী, সবাই যেন মাদকের চেনা স্টেকহোল্ডার। ভাগবাটোয়ারাপ্রাপ্ত সুবিধাভোগী এই গোষ্ঠীর নিবিড় ছায়াতলে মাদকের অনুপ্রবেশ, বিচরণ, বিস্তার, ব্যবহার আমাদের সমাজকে দিন দিন পঙ্গু করে দিচ্ছে। সবাই চরম সত্যটাকে অস্বীকার করে প্রতারণার ফাঁদ পেতে মাদক নিয়ে অন্যায় করতে বদ্ধপরিকর। কি বৈপরিত্য! কি কপট ভূমিকা আমাদের মধ্যে!
- ট্যাগ:
- মতামত
- মাদক চোরাচালান