ইউরোপ কীভাবে বিশ্ব জয় করেছে
ফুটবলের বিশ্বকাপ শুরু হয়ে গেছে। ১৯ নভেম্বর ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো সংবাদ সম্মেলনে সব রকম বিভেদ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান আবেগপূর্ণ ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন, তিন হাজার বছর ধরে ইউরোপ সারা বিশ্বে যে পাপ কাজ চালিয়েছে, তার জন্য তাদের আগামী তিন হাজার বছর ধরে ক্ষমা চাইতে হবে।
সারা বিশ্বে ইউরোপের অগ্রবর্তিতার শক্ত ভিত দিয়েছে তাদের রেনেসাঁস, বিজ্ঞান ও আবিষ্কার, আলোকন, শিল্পবিপ্লব এবং অবশ্যই আধুনিক জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের উপযুক্ত রসদপ্রাপ্তি। এ তাদের অর্জন। আবার এটাও সত্য যে পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে, ইউরোপীয় অভিযাত্রী, বণিক, ভাগ্যান্বেষীরা সারা পৃথিবী জয়ে বেরিয়ে পড়েছিল। বলা যায় টানা পাঁচ শ বছর ধরে এরা মূলত নির্বিচার লুণ্ঠন ও নিষ্ঠুরতার সমন্বয়ে তাদের বৈশ্বিক আধিপত্য নিশ্চিত করেছিল।
ইউরোপের অভিযাত্রীদের সঙ্গে ছিল বণিক ও ধর্মপ্রচারকেরা। সেই সঙ্গে অবশ্যই ছিল অজানা মানুষ ও দেশকে মোকাবিলা এবং জয়ের জন্য উপযুক্ত অস্ত্র ও বাহন এবং সেনাবাহিনী।
এই লক্ষ্য নিয়ে প্রথম ইউরোপীয় অভিযাত্রী কলম্বাস আমেরিকায় পা রেখেছিলেন। আমরাও শিখেছি কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দে। যেন এর আগে মহাদেশটি ছিল না বা সেখানে কোনো মানুষের বসবাস ছিল না। সেই থেকে শুরু নিজেদের গোলাকার এই গ্রহের মধ্যমণি ধরে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের নামকরণ।
ইউরোপের ইতিহাসকারেরা অনেক কাল ধরে বলে গেছেন এখানকার বনজঙ্গল এবং বিরান অঞ্চলের ফাঁকে ফাঁকে বিচ্ছিন্নভাবে যেসব মানুষ বাস করত, তারা হলো অনুন্নত ও আদিম মানুষ। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল ইউরোপেরও অনেক আগে থেকেই এখানকার মানুষ শুধু সভ্য নয়, মেক্সিকো এবং দক্ষিণ আমেরিকায় গড়ে তুলেছিল তিনটি উন্নত সভ্যতা মায়া, অ্যাজটেক ও ইনকা। কিন্তু ইউরোপীয়রা তখন এদের জীবন ও জ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হতে বা বিনিময়ের জন্য আসেনি, তারা এসেছিল স্রেফ এদের হটিয়ে বা মেরে ইচ্ছেমতো লুটপাট ও নিজেদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে। ফলে দুই মহাদেশের আদিবাসী, যাদের তারা ভুলভাবে রেড ইন্ডিয়ান নামকরণ করেছিল, সরল বলিষ্ঠ মানুষদের তারা ভাঁওতা দিয়ে, চক্রান্ত করে এবং সীমাহীন নিষ্ঠুরতার আশ্রয় নিয়ে রাজ্যচ্যুত, ভূমিচ্যুত এবং শেষ পর্যন্ত নির্বিচার হত্যা করেছিল। বহিরাগতরা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল গুটিবসন্ত, টাইফয়েড, কলেরা, প্লেগের মতো ভয়ংকর মড়ক।