উজ্জীবিত বিএনপি, চিন্তিত আওয়ামী লীগ
বিএনপির সাম্প্রতিক সমাবেশগুলোতে লোকসমাগমের প্রাচুর্য দলটির নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করেছে, পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে উঠেছে বলে রাজনীতিসচেতন ব্যক্তিদের ধারণা। তাঁরা মনে করেন, সমাবেশগুলোতে শুধু দলীয় নেতা-কর্মী নন, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সাধারণ মানুষও অংশ নিচ্ছে; বিশেষ করে প্রতিটি সমাবেশে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষে সরকারের বাধাদান দলটির কর্মীদের ভেতরে একধরনের জেদের সঞ্চার করেছে।
যার প্রতিফলন ঘটেছে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া সত্ত্বেও নেতা-কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে। তাঁদের কেউ এসেছেন মাইলের পর মাইল হেঁটে, কেউ রিকশা-ভ্যানগাড়িতে, কেউ ইঞ্জিনচালিত নৌকায়, এমনকি বরিশালের সমাবেশে অনেককে কলাগাছের ভেলায় চড়েও সমাবেশে যোগ দিতে দেখা গেছে। নেতা-কর্মীদের এই উদ্দীপনা দলটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির প্রমাণ বহন করে কি না, সেটা তর্কসাপেক্ষ ব্যাপার। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে যে গত প্রায় এক যুগের মধ্যে এবারই বিএনপির নেতা-কর্মীরা ভয়ভীতি উপেক্ষা করে দলীয় কর্মসূচি সফল করতে সচেষ্ট হয়েছেন। দীর্ঘদিনের শীতনিদ্রার পর বিএনপির এই আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠাকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে। তারা বলছে, বিএনপির এই উদ্দীপ্ত অবস্থা নিকট ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে বড় রকমের প্রভাব ফেলতে পারে।
একই সঙ্গে এ প্রশ্নও উঠেছে যে তাহলে কি সরকারের জনপ্রিয়তার সূচক নিম্নমুখী হয়েছে? এ বিষয়ে ১৪ নভেম্বর একটি দৈনিকে ‘বিএনপির কর্মসূচিতে উপস্থিতি নিয়ে চিন্তিত সরকার’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপির গণসমাবেশ কর্মসূচিতে মানুষের উপস্থিতি নিয়ে চিন্তিত আওয়ামী লীগ সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও তাঁদের অনেকেই বলছেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচার তেমন কাজে আসছে না। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, সার, জ্বালানি-তেল, বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকট এবং দুর্নীতি সরকারের সাফল্যকে কিছুটা হলেও ম্লান করেছে। দেশবাসী সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুফল ভোগ করলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেই নেতিবাচক দিকগুলোই সামনে আনছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এসব কারণেই বিএনপির সমাবেশগুলোতে উপস্থিতি বাড়ছে।
তবে আওয়ামী লীগের নেতারা তা স্বীকার করতে অনাগ্রহী। তাঁরা বলছেন ভিন্ন কথা। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী পত্রিকাটিকে বলেছেন, এখানে সরকারের কোনো ব্যর্থতা আছে বলে তিনি মনে করেন না। তাঁর মতে, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের কারণে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হয়েছে, কম সময়ে মানুষ যেকোনো স্থানে যেতে পারছে। এ জন্য সমাবেশগুলোতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা যেতে পারছেন। জাহাঙ্গীর কবির নানক মনে করেন, বিএনপির সমাবেশে কেমন লোক হয়েছে তা দিয়ে জনপ্রিয়তা প্রমাণিত হয় না। এর মাধ্যমে বিএনপিসহ কোনো মহল যদি সরকারের ব্যর্থতা খোঁজে তাহলে ভুল হবে। তাঁর মতে, জনপ্রিয়তা প্রমাণের একটাই পথ—নির্বাচন।