বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে দোকান, ভবন
সারি সারি মুদিদোকান, চা-দোকান আর ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে দখল হয়েছে মাঠের একাংশ। এক জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবনও। বাকি ফাঁকা অংশ ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রাক পার্কিং প্লেস হিসেবে। দেখে বোঝার উপায় নেই, এটা গাবতলী এলাকার শতবর্ষী খেলার মাঠ। এই মাঠে একসময় উচ্ছল শৈশব কাটিয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ এলাকার শিশুরা। খেলাধুলা করত কিশোর-তরুণেরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছয় বিঘা আয়তনের খেলার মাঠটির মালিক মিরপুর সিদ্ধান্ত হাইস্কুল। খেলার মাঠ হিসেবে ১৯১৮ সালে ওয়াকফ সম্পত্তিভুক্ত জায়গাটি ওই স্কুলের নামে রেজিস্ট্রি (নং ২৩০৩) করে দিয়েছিলেন মুন্সি লাল মিয়া। এরপর থেকে স্কুলের শিক্ষার্থী ও এলাকার শিশু-কিশোরেরা এই মাঠে খেলাধুলা করত। গত ১২ বছরে পর্যায়ক্রমে বেদখল হয়ে গেছে মাঠটি।
স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী ও দাতা-সদস্য গিয়াসউদ্দিন জানান, তাঁর পরিবার তিন প্রজন্ম ধরে মিরপুর সিদ্ধান্ত হাইস্কুলের সঙ্গে জড়িত। তাঁর বাবা শামসুর রহমান এই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি নিজে পড়েছেন, তাঁর ছেলে আরাফাত রহমান শুভ্রও কয়েক বছর আগে উচ্চমাধ্যমিকের পাট চুকিয়েছেন এই স্কুল থেকে।
গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘গাবতলী মাঠে ছোট বেলায় অনেক খেলেছি। আশপাশে খেলার জায়গা না থাকায়, এই মাঠই ছিল ভরসা। শৈশবের সেই মাঠ এখন দখল হয়ে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।’
রক্ষক হয়েই ভক্ষকের ভূমিকায় স্কুলসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দশকের পর দশক ধরে স্কুলের শিক্ষার্থী ও এলাকার শিশু-কিশোরেরা মাঠে খেলাধুলা করত। মুন্সি লাল মিয়ার মেয়ের দিকের নাতি আসলামুল হক ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর প্রভাব কাজে লাগিয়ে ২০১০ সালের দিকে মাঠটি দখল করা হয়। তখন আসলামুল হকের বড় ভাই মফিজুল হক বেবু সিদ্ধান্ত স্কুল পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি স্কুল থেকে একটি ছাড়পত্র নিয়ে এই দখল প্রক্রিয়া শুরু করেন।
স্কুলের শিক্ষকেরা তখন মাঠের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি।
আসলামুল হক ২০২১ সালে মারা যাওয়ার পর আগা খান মিন্টু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে স্কুল কর্তৃপক্ষ মাঠ উদ্ধার করতে সোচ্চার হয়। মিরপুর সিদ্ধান্ত হাইস্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাইয়ুম খান ঝন্টু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাঠটা আমাদের স্কুলের। আসলামুল হক এমপি হওয়ার পর তাঁর স্বজনেরা মাঠটা দখল করে নিয়েছে। আমরা মাঠ উদ্ধার করব।’ একই অভিমত সিদ্ধান্ত হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমানেরও।
মাসে ভাড়া ওঠে পাঁচ লাখ টাকা সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, গাবতলী মাঠে শতাধিক অফিস ও ছোট-বড় দোকান। কয়েকজন দোকানি জানান, মাঠের দোকান ও অফিস থেকে প্রতি মাসে অন্তত পাঁচ লাখ টাকা ভাড়া ওঠে। জায়গাটির বর্তমান বাজারদর প্রায় ২০০ কোটি টাকা।