কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক ও বিচ্ছেদ

দেশ রূপান্তর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০২২, ১০:৩৩

ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের পর ১৯৬৯ সালের মধ্যভাগে রাজনীতি ও আন্দোলনের গতিধারাটা কী দাঁড়াবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল, ইয়াহিয়া খান কোন ধরনের পদক্ষেপ নেবে সে বিষয়েও প্রশ্ন ছিল, মুজিব তখন কানাডার একজন সাংবাদিককে একটি সাক্ষাৎকার দেন; শর্ত ছিল যে সেটি প্রকাশ করা যাবে না; ওই সাংবাদিকমার্ক গেন তার নাম প্রকাশ করেননি বটে, তবে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে পৌঁছে দিয়েছিলেন ঠিকই। ২০২০ সালে ওয়াশিংটনের মহাফেজখানা থেকে প্রয়াত সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান সেটি উদ্ধার করেন। ওই সাক্ষাৎকারে ইয়াহিয়া সরকারের বিরুদ্ধে মুজিবের প্রধান অভিযোগটাই ছিল এই যে, ইয়াহিয়ার শাসনে উদার গণতন্ত্রপন্থিরা নয়, কমিউনিস্টরাই সুবিধা পাচ্ছে। তার বর্ণনায়, ‘আমরা সরকারি নীতির সমালোচনা বা সভা করতে পারি না। যারা গোপন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তারাই কার্য চালাতে পারে। আমরা যারা সাংবিধানিক রাজনীতি ও প্রকাশ্য রাজনীতিতে বিশ্বাসী তারা পারি না। তারা আমাদের অফিস খোলা রাখতে দেয়, কিন্তু জনসভা করতে দেয় না।’ আরও বলেছেন, ‘যদি সরকার আমাদের গণতন্ত্র দেয় [...] বামপন্থিদের তখন ভয় করার দরকার নেই। [...] যদি তারা নির্বাচন না দেয়, কেউ যদি ভাবে যে সাত কোটি মানুষকে বুলেট দিয়ে দাবায়ে রাখতে পারবে, তাহলে আমরা উদারপন্থিরা খারাপ অবস্থায় পড়ব। সরকারের জানা উচিত যে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। ক্ষুধার্ত মানুষের কোনো ধর্ম বা আদর্শ নেই। ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা তারা করবেই। [...] গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে বামপন্থিরা সুযোগ পেয়ে যাবে। সামরিক শাসকের অধীনে কমিউনিস্টরা সংগঠিত হচ্ছেন, যেমনটা আইয়ুবের আমলে হচ্ছিলেন। তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে কাজ করেন, আর আমরা কার্যক্রম চালাতে পারি না। সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের মনোভাবটা অবিলম্বে বদলাতে হবে।’


ব্যক্তিগতভাবে কমিউনিস্টদের যে তিনি অপছন্দ করতেন তা নয়, তাদের অনেকের সঙ্গেই তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল, তবে তিনি তাদের রাজনীতির বিরোধী ছিলেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে নিজের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘আমি নিজে কমিউনিস্ট নই। তবে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি না। একে আমি শোষণের যন্ত্র হিসেবে মনে করি। এই পুঁজিপতি সৃষ্টির অর্থনীতি যত দিন দুনিয়ায় থাকবে তত দিনে দুনিয়ার মানুষের ওপর থেকে শোষণ বন্ধ হবে না।’ তার আকাক্সক্ষা ছিল পাকিস্তান হবে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেখানে সব নাগরিকের থাকবে সমান অধিকার। কিন্তু মুসলিম লীগের নেতারা সেটা চাননি। শেখ মুজিবের ভাষায়, ‘পাকিস্তানের শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষ যে আশা ও ভরসা নিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে শরিক হয়ে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে তাদের অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে কোনো নজর দেওয়াই তারা দরকার মনে করে না।’


পাকিস্তান রাষ্ট্র যে কমিউনিজমকে একটা বিপজ্জনক ছোঁয়াচে রোগ মনে করত সেটা দেখে তিনি কৌতুকও বোধ করেছেন। ১৯৪৯-এ ঢাকা জেলে কারাবাসের সময়ে কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হাজি দানেশকে প্রথমে শেখ মুজিবদের সঙ্গেই রাখা হয়েছিল। কিন্তু ‘দুদিন পরেই আবার তাকে আমাদের কাছ থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হলো। কারণ সরকারি হুকুমে আমাদের সঙ্গে কাউকেও রাখা চলবে না। বিশেষত সরকারের মতে যারা কমিউনিস্ট তাদের সঙ্গে তো রাখা চলবেই না। তাহলে আমরা যদি কমিউনিস্ট হয়ে যাই।’ সেবার দেখা গেল যে অনেককেই জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হলো, শেষ পর্যন্ত রয়ে গেলেন শুধু দুজন, শেখ মুজিবুর রহমান ও বাহাউদ্দিন চৌধুরী। শেখ মুজিবকে আটকে রাখার কারণ বোঝা যায়, তিনি প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী মুসলিম লীগের তেজস্বী যুগ্ম সম্পাদক; কিন্তু অল্পবয়সী বাহাউদ্দিন চৌধুরীকে না ছাড়ার কারণটা কী? মুজিব জানাচ্ছেন, ‘কারণ হলো, সরকার সন্দেহ করছিল সে কমিউনিস্ট ভাবাপন্ন হয়ে পড়ছিল। এ সময় অনেককেই কমিউনিস্ট বলে জেলে ধরে আনতে শুরু করেছিল [...] এদের মধ্যে অনেকেই ইংরেজ আমলে বহুদিন জেল খেটেছেন।’ জেলখাটা আত্মত্যাগী কমিউনিস্টদের প্রতি তার ভক্তি-শ্রদ্ধার কোনো ঘাটতি ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল ওই এক কথা : ‘আমি কমিউনিস্ট নই’। ষাট দশকের শেষে এসে তার অনুসারী যুবকরা অনেকেই সমাজতন্ত্রপন্থি হয়ে উঠেছিল, কেউ কেউ জোরেশোরে সামাজিক বিপ্লবের আওয়াজও দিচ্ছিল। কিন্তু তিনি তাদের যে নেতৃত্ব দেবেন সেটা মোটেই সম্ভব ছিল না। যুদ্ধশেষে যখন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের রণধ্বনি তুলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠিত হয় তখন তার প্রধান সংগঠকও তার প্রতি অনুগত নিকটজন সিরাজুল আলম খানকে তিনি বলেই দিয়েছিলেন যে তার পক্ষে কমিউনিস্ট হওয়া সম্ভব নয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও