চাঁপাই কাঁপে ককটেলে
‘ককটেল তো এখানে পটকা। এই জিনিসটা নিয়ে জানতে আপনাকে এত দূর থেকে কেন আসতে হলো বুঝলাম না।’ গত বুধবার দুপুরে নিজের দপ্তরে অনেক মানুষের সামনে এই প্রতিবেদককে কথাটি বললেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আলমগীর জাহান।
ওসির পাশে তখন বসে ছিলেন ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম চর বাগডাঙ্গা থেকে আসা মো. হাবিব। হাসতে হাসতে ওসির কথায় সায় দিয়ে বললেন, ‘বিয়েবাড়িতে পটকা ফুটিয়ে মানুষ আনন্দ করে না? ওই রকম। এখানে ককটেল ফুটিয়ে আনন্দ করে, এটি দিয়েই মানুষকে ভয় দেখায়।’
সীমান্তের এই জেলায় ককটেল যে আসলেই ‘পটকা’ তা বোঝা গেল একটু খোঁজখবর নিতেই। শহরের লোকজন জানালেন, দুই দশক আগে থেকেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে ককটেলের ব্যবহার শুরু। পদ্মার ওপারের চরের গ্রামগুলোতে আগে খই ফোটার মতো ককটেল ফুটত। পরে এর ব্যবহার শুরু হয় শিবগঞ্জ উপজেলায়। কয়েক বছর আগেও শিবগঞ্জের মর্দানা ও রানীহাটির মানুষের ঘুম ভাঙত ককটেল ফোটার শব্দে। এখন ককটেল ফুটছে শহরেও।
এসব ককটেল তৈরি হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জেই। আর এই ককটেল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে রাজনীতির অস্ত্র হিসেবে। এ ছাড়া জমি দখলে নেওয়ার সময় ভাড়াটে বাহিনী প্রভাবশালীর পক্ষে ককটেল হামলা করে। প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতেও বাড়ি কিংবা অফিসের সামনে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
৪ নভেম্বর হামলার শিকার হন শিবগঞ্জ লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক শিলু ও তাঁর ছেলে ইমন। রাত পৌনে ১০টার দিকে ভাঙা ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আশরাফুল জানান, তিনজন মুখোশধারী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। কুপিয়ে জখম করা হয় তাঁদের। পরে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
গত ২২ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জ
পৌরসভার জিয়ানগর এলাকায় হঠাৎই ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। বাড়িটি পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শহিদের। বিস্ফোরণে শহিদ ও তাঁর সৎমা ফাহমিনা বেগম গুরুতর আহত হন। দুই দিন পর ফাহমিনা মারা যান। বিস্ফোরণের পরই পুলিশ মামলা করে। এতে শহিদ ও তাঁর মাকে আসামি করা হয়। সদর থানা-পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, শহিদের বাড়িতে ককটেল তৈরির সময় ওই বিস্ফোরণ ঘটে। শহিদের নামে আগেও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়েছিল।
আরও তিন বাহিনী
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো চার গ্রুপের সদস্যরাই ককটেলের ব্যবহার করে। গ্রুপের সবাই ককটেল বানাতেও পারে। এদের বলা হয় ‘কারিগর’। আর গ্রুপের যেসব সদস্য ককটেল ফাটানোর কাজটি করে, তাদের বলা হয় ‘ফাইটার’। ফাইটার সবচেয়ে বেশি হাসিবুল গ্রুপে। এ গ্রুপে আছে বোমা আশিক, বোমা আকবর, নিশান, তারেক, ছোট জুয়েল, ছোট আব্দুল্লাহ, মাইছা মাসুম, কাইল্যা জুয়েল, মনিরুল, ওয়াসি, হাসিন, হোসেন, আপন, ছোট ওসমান, চিকা ওসমান, আবির, আরাফাত, অন্তর, মোশাররফ, সাজু খলিল, হযরত, রতন, সামিরুল ও ভাংড়ি এসরাফিল।