ফিকে হয়ে আসা ৭ নভেম্বর
৭ নভেম্বরের আবেদন এখন ফিকে হয়ে এসেছে। যাঁরা একে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ বলতেন কিংবা বলতেন ‘সিপাহি-জনতার বিপ্লব’, তাঁদের পরবর্তী কার্যাবলিতে বোঝা গেছে, আসলে কে যে কী চাইছিলেন, সে বিষয়টি কারও কাছেই স্পষ্ট ছিল না। নানাভাবে এ সময়টিকে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে। তবে এ কথা ঠিক, ৭ নভেম্বরে সব দিক থেকে সবচেয়ে লাভবান হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। ধীরে ধীরে তিনি ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ‘সিপাহি-জনতা ভাই ভাই, অফিসারের রক্ত চাই’ স্লোগানে যখন সেনানিবাস ও রাজপথ মুখরিত হয়ে উঠছিল, তখন সেনাবাহিনীতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছিল। অফিসাররা আতঙ্কিত হয়েছেন, সিপাহিরা উন্মাদের মতো অফিসারদের খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন খুন করার জন্য।
তবে এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়, ৭ নভেম্বরের পর ইতিহাসের বাঁকবদল হয়েছে। ১৫ আগস্টের ট্র্যাজিক ঘটনাবলি বিমূঢ় করে রেখেছিল দেশকে। কেউই বুঝতে পারছিল না, কী হতে কী হয়ে গেল। প্রতিরোধ আন্দোলন যে গড়ে উঠল না, তার বেশির ভাগ দায় আওয়ামী লীগেরই। তাদেরই দলের সদস্যরা মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ায় বোঝা যাচ্ছিল না, এই পটপরিবর্তনের ঘটনাটি দলগতভাবে আওয়ামী লীগ কীভাবে দেখছে। মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের অনেকেই মোশতাকের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। শুধু ক্রমে ক্রমে প্রকাশিত হচ্ছিল, রুশ-ভারত বলয় থেকে বেরিয়ে দেশ যাত্রা শুরু করেছে মার্কিন বলয়ের দিকে। কে এম সফিউল্লাহকে সরিয়ে জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করা হয়েছে।
এ রকম একটা সময়ে খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ঘটে অভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থান ছিল রক্তপাতহীন। জিয়াউর রহমানকে সরিয়ে খালেদ মোশাররফকে সেনাপ্রধান করা হয়। এ সময়েই ঘটে আরও একটি ভয়ংকর ঘটনা। জেলখানায় হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে। দেশের নেতৃত্ব আবার মুক্তিযুদ্ধ-সংলগ্ন ত্যাগী নেতাদের হাতে চলে যাক, এটা মোশতাক গং চাননি, তাই এই হত্যাকাণ্ড।
- ট্যাগ:
- মতামত
- জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস