বাস মালিক ও শ্রমিকরা সরকারকে বিব্রত করছে
বিএনপি তাদের আন্দোলনের অংশ হিসাবে চার জেলায় চারটি সমাবেশ করেছে। জনসমাগমও কম হয়নি। সব সমাবেশের আগেই গণতন্ত্রের দেশে সংশ্লিষ্ট এলাকায় দুদিনের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা। ফলে যানবাহন চলেনি। সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট হয়েছে। বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন, এসব ঘটেছে সরকারের ইঙ্গিতে। যাতে সভায় বেশি লোক সমাগম না হতে পারে। সরকারি দলের নেতা ও মন্ত্রীদের কেউ কেউ এ দাবি অস্বীকার করেছেন। অসহায়ের মতো তারা বলেছেন, বাস মালিকরা যদি তাদের দাবি নিয়ে ধর্মঘট করে যানবাহন বন্ধ করে দেয়, তা হলে সরকারের কী করার আছে! এসব শুনে ও দেখে মনে হচ্ছে, ডিজিটাল বাংলাদেশে আমাদের রাজনীতি এখনো ডিজিটাল হতে পারেনি বলে পুরোনো ফর্মুলায়ই চলছে!
আমরা ভুলে যাই যে, বৈশ্বিক সংকটের কথা বাদ দিলে বর্তমান সরকারের অন্যতম বড় সাফল্য দেশজুড়ে বিদ্যুতায়ন। এখন গ্রামে-গঞ্জে-প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ চলে গেছে। আলোতে অন্ধকারের ভূত বিদূরিত হয়। সাধারণ মানুষ স্বচ্ছভাবে সব দেখতে পায়। গণমানুষকে অন্ধকারে রেখে যা খুশি করা যায় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ পরিকল্পনা সাধারণ মানুষের দৃষ্টিসীমাকে আরও স্পষ্ট করেছে। তারা দূরগ্রামে বা পাহাড়ে বসেও টেলিভিশন চ্যানেল দেখতে পায়। কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে। মোবাইল ফোনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও যুক্ত হতে পারছে। তাই এখন আর এদেশের মানুষকে অন্ধকারে থাকা সাধারণ মানুষ বলে ভাবাটা ঠিক হবে না। প্রকৃত সত্য জানা আর এর মূল্যায়ন করার ক্ষমতাও তৈরি হয়েছে। আমাদের নেতারা যদি এখনকার সাধারণ মানুষের মতো ডিজিটাল মেধা নিয়ে নীতিনির্ধারণ করতে পারতেন, তাহলে গতানুগতিক ফর্মুলায় না গিয়ে ভেবে-চিন্তে রাজনৈতিক বক্তব্য দিতেন এবং সেইমতো নীতিনির্ধারণ করতেন। একসময় যা কাজে লাগত এখন যে তা বুমেরাং হতে পারে, সে সত্য গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা উচিত।
সাধারণ মানুষের মনে সেই কবিতার লাইন ভাসছে, ‘মাথায় অনেক প্রশ্ন আছে দিচ্ছে না কেউ জবাব তার...’। মানুষ ভাবছে পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের হঠাৎ খণ্ডিত অঞ্চলে ধর্মঘট কেন! নিয়ম তো জানি কোনো দাবিদাওয়া থাকলে অনেক দিন মাঠ সরগরম থাকে। শেষ পর্যন্ত দাবি আদায় না হলে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বিবেচনা করে সরকার তৎপর হয়। সরকারি দলের নেতা-মন্ত্রীরা মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে নিবৃত করার চেষ্টা করেন। সমাধান না হলে সরকার বিশেষ বিবেচনায় অন্তত সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য সরকারি গাড়ি চালানোর চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে কিছুই ঘটল না। সরকারি দলের নেতা আর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের কেউ কেউ টিভি ক্যামেরার সামনে যেভাবে বক্তব্য রাখলেন একে অসহায় আত্মসমর্পণই বলা যায়! তারা জানালেন পরিবহণ মালিকরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য পরিবহণ ধর্মঘট করলে সরকার কী আর করতে পারে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- গণপরিবহন বন্ধ
- বিএনপির আন্দোলন