খরচ ৪০ কোটি টাকা, প্রাপ্তি শূন্য!
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে পশুখাদ্য সংমিশ্রণ কারখানা (টোটাল মিক্সড রেশন বা টিএমআর প্লান্ট) চার বছরেও চালু হয়নি। ঢাকার উপকণ্ঠ সাভারের ডেইরি ফার্ম ক্যাম্পাসে কারখানায় দামি মেশিনপত্র পড়ে আছে অচল অবস্থায়। কৃত্রিম প্রজনন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কারখানাটি উৎপাদন অবস্থায় বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা দেয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জেনটেক ইন্টারন্যাশনাল। দরপত্রের শর্ত ভঙ্গের কারণে এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি কর্তৃপক্ষ। উল্টো অধিদপ্তরের ঠিকাদারি কাজে রয়েছে তাদের আধিপত্য।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এ কাজে সরকারের প্রায় ৪০ কোটি টাকা খরচ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতা ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় প্রাপ্তি শূন্য। অথচ যে প্রকল্পের অধীনে টিএমআর প্লান্ট স্থাপন হচ্ছে সেই প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর আগে শেষ হয়ে যায়। এরপর আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। যা আগামী ডিসেম্বরে শেষ হবে। এতকিছুর পরও এখনো প্লান্টটি থেকে সুফল মিলছে না। একাধিক সূত্রে উল্লিখিত তথ্য পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে কৃত্রিম প্রজনন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রকল্পের আওতায় সংশোধিত ডিপিপিতে ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে টিএমআর প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি আহ্বান করা হয় টেন্ডার। দরপত্রে বিশেষ শর্ত দেওয়ায় অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারেনি। একই ব্যক্তির মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জেনটেক ইন্টারন্যাশনাল ও মেসার্স সিমেক্স ইন্টারন্যাশনাল দরপত্র জমা দেয়। ২৮ কোটি ৫৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দর দিয়ে কার্যাদেশ পায় জেনটেক ইন্টারন্যাশনাল। ২০১৮ সালের ১৮ জুন নোয়া পাওয়ার পর ২৫ জুন চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর (১৫ মাসের মধ্যে) প্লান্ট চালু করে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্লান্টের কাজ শেষ না হলেও ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে মূল প্রকল্পের (কৃত্রিম প্রজনন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর) মেয়াদই শেষ হয়ে যায়। তখন সবকিছু বিবেচনা করে মূল প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
জানা গেছে, চুক্তি অনুযায়ী টিএমআর প্লান্ট চালুর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে ৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল। শর্ত অনুযায়ী ৬ জনকে নিয়োগও দেওয়া হয়েছিল। বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, এই ৬ জন ২ বছর বসে বসে অন্তত ৩০ লাখ টাকা বেতন-ভাতা নেন। কিন্তু কারখানা চালু করতে না পারায় তাদের কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়নি। ফলে গচ্চা গেছে তাদের বেতন-ভাতার টাকা।