সুদের হার বেঁধে রেখে কার লাভ?
বাংলাদেশে সরকার তথা নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক বেঁধে দেয়া সুদ হার প্রবর্তিত হয়েছে দুই বছরের অধিককাল। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া এ সুদহার তথাকথিত নয়-ছয় সুদহার নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। নয়-ছয় সুদহারের মূল কথা হলো ব্যাংকের মেয়াদি আমানতের সুদ হার হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ আর বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের সুদ হার হবে সর্বোচ্চ শতকরা ৯ ভাগ।
বাজার ব্যবস্থার ওপর ছেড়ে না দিয়ে যে পদ্ধতিতে নয়-ছয় সুদহার নির্ধারিত হয়েছিল, তা অর্থনীতির মূল সূত্রবহির্ভূত হলেও সে সময়ে জনসাধারণের কাছে প্রশংসিত হয়েছিল। ২০২০ সালের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল দেশ ছাপিয়ে বহির্বিশ্বেও আলোচিত। একটু পেছন ফিরে পরিসংখ্যান ঘাঁটলেই দেখা যাবে সে সময়ে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় আট শতাংশের কাছাকাছি এবং তা বেশ কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে অর্জিত হচ্ছিল। সরকারি উদ্যোগে যেমন বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট নেয়া হচ্ছিল, ঠিক তেমনই সমানতালে বেসরকারি উদ্যোগে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার লাভ করছিল। দেশীয় উদ্যোক্তা মহল যেভাবে মূলধনের খোঁজে হন্যে হয়ে অর্থ ও মূলধন বাজারে প্রবেশ করছিল, ঠিক তেমনই বিদেশী উদ্যোক্তারা এ দেশে সরাসরি এবং অংশীদারি বিনিয়োগে আগ্রহী ছিল। এমন বাস্তবিক পরিস্থিতিতে দেশী উদ্যোক্তারা যাতে করে প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করতে পারেন এবং মূলধন সংগ্রহ খরচ যথার্থ হয়, সেজন্যই মূলত ব্যাংকঋণের সুদের হার কমানোর যৌক্তিকতা। ভিন্নভাবে বলতে গেলে ঋণের সুদের হার কমানো সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। সরকার চাচ্ছিল দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে জনদুর্ভোগ লাঘব এবং জনতুষ্টি অর্জন করা। সুদের হার কমানোর ফলে দেশীয় উদ্যোক্তারা কম খরচে মূলধন সংগ্রহ করতে পারলে অধিকতর বিনিয়োগে তাদের আগ্রহ সৃষ্টি হয়। অধিকতর বিনিয়োগ হলে কর্মসংস্থান বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। আর কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেলে মানুষের আয় বাড়ে এবং কল্যাণ সাধিত হয়। জনসাধারণও বেশি বেশি খরচ করতে উৎসাহিত হয় বিধায় সার্বিকভাবে দেশজ উৎপাদন বাড়ে।