আগে তো নয় মণ ঘি জোগাড় হোক
রাষ্ট্র সংস্কারের মতো একটি বৃহৎ কর্মযজ্ঞ যে এতটা সহজ নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ধরনের শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন দুইভাবে সম্ভব—এক. সমাজবিপ্লব ঘটিয়ে, দুই. নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে।
২ অক্টোবর আজকের পত্রিকায় আমার লেখা ‘বিএনপির কাঁধে ফের সংস্কারের ভূত!’ শিরোনামের নিবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার পর পরিচিত অনেকেই ফোনে তাঁদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় সবাই বলেছেন, সঠিক সময়ে আমি একটি সঠিক বিষয় তুলে ধরেছি; যা বিএনপিকে তাদের কর্মপন্থা নির্ধারণে সহায়তা করবে। আমি তাঁদের বলেছি, বিএনপি তাদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে নিজেদের সিদ্ধান্তে। সেখানে আমার নিবন্ধ তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারে, এমনটি আমি মনে করি না। তবে আমি মনে করি রাষ্ট্র সংস্কারের যে অবিমৃশ্যকারী ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে বিএনপি সময়ের অপচয় করছে, তাতে তাদের লোকসান বৈ লাভ হবে না। অবশ্য কেউ কেউ আমাকে এই বলে অভিযুক্ত করেছেন, আমি নাকি বিএনপিকে পেছন থেকে ছোরাবিদ্ধ করার চেষ্টা করছি। তাঁদের আমি স্পষ্ট করেই বলেছি, যেহেতু আমি এই দলটির সঙ্গে একসময় সম্পৃক্ত ছিলাম, তাই পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
নিবন্ধটি পাঠান্তে বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী তাঁর প্রতিক্রিয়া পাঠিয়েছেন মেসেঞ্জারে। সহৃদয় পাঠকদের জ্ঞাতার্থে তাঁর পাঠানো প্রতিক্রিয়াটি এখানে হুবহু তুলে ধরছি। তিনি লিখেছেন, ‘চমৎকার লেখা। এ প্রসঙ্গে আরও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থায় এ ধরনের যুগান্তকারী পরিবর্তন (ফেডারেটেড স্ট্রাকচার) আনতে গেলে কেউ কেউ রেফারেন্ডামের বিষয়টিও সামনে আনতে পারেন। তদুপরি বাংলাদেশের মতো একটি সদৃশ দেশে ফেডারেটেড ব্যবস্থা আদৌ প্রযোজ্য হবে কি না, কিংবা এই ধরনের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা বাংলাদেশকে বহুধাবিভক্ত করে ফেলবে কি না, সেসব মারাত্মক তাত্ত্বিক প্রশ্নও সামনে চলে আসতে পারে। যারা এসব কথা প্রচার করছে, তারা কি একবারও এ সকল প্রশ্নের গভীরে গিয়েছে?’ সংগত কারণেই ভদ্রলোকের নামোল্লেখ করা থেকে বিরত থাকলাম। কেননা, তাঁর নামটি আমি যদি খোলাসা করি, তাহলে পরক্ষণেই তাঁর ঘাড়ে শাস্তির খড়্গ নেমে আসতে পারে। কারণ, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য প্রাণপাত আন্দোলনরত বিএনপির অভ্যন্তরে এখন গণতন্ত্রের আকাল চলছে। সেখানে চলছে এক ব্যক্তির শাসন। তাঁর অঙ্গুলি হেলনে কেউ কেউ উঠে যাচ্ছেন পর্বত-শৃঙ্গে, আবার কেউ কেউ মুহূর্তেই পতিত হচ্ছেন ভূতলে। হাজার হোক ভদ্রলোক এই কঠিন রাজতন্ত্রের মধ্যেও দলটির শীর্ষ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য পদে বহাল আছেন। আমার কারণে তাঁর ক্যারিয়ারের ক্ষতি হোক, তা আমি চাই না। তবে তিনি যে কথাগুলো বলেছেন, সেগুলো যে অত্যন্ত যুক্তিসংগত এবং বিএনপির জন্য অতীব জরুরি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিএনপির মিডিয়া সেল নামের নয়া দোকানটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের যে তত্ত্বটি বাজারে সেল করার চেষ্টা করছে, তা কতটা বাস্তবসম্মত, তা ভেবে দেখার অবকাশ আছে।