সুস্থ ছাত্ররাজনীতিতে তরুণদের আগ্রহের কমতি নেই
আসিফ নজরুল লেখক, ঔপন্যাসিক, রাজনীতি-বিশ্লেষক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও কলামিস্ট। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতি ও সাম্প্রতিক নানা সংকট নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের সঙ্গে।
আসিফ নজরুল : উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে তো ছাত্ররাজনীতি সেভাবে ভূমিকা রাখে না। এর মূল দায়িত্ব হচ্ছে ইউনিভার্সিটি জয়েন্ট কমিশন এবং বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনগুলোর। এখন ছাত্রদের তো সাধারণ পড়াশোনা করারই পরিবেশ নেই। হলের মধ্যে তাদের গণরুমে রাখা হয়, জোরপূর্বক কর্মসূচিতে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়, তাদের এক ধরনের দাসত্বের জীবন বেছে নিতে হয়। তো এই দাসত্বের জীবন নিয়ে তারা বর্তমান যে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা আছে সেটা বজায় রাখতেই তো হিমশিম খায়। শিক্ষার্থীদের ট্রান্সপোর্ট, লাইব্রেরি ফেসিলিটিজ, আবাসন ইত্যাদি এসবের অপ্রতুলতা রয়েছেই। তবে এখন তো শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে এগুলো আর আগের মতো বড় ইস্যু হয়ে নেই। আপনি দেখেন কিছুদিন আগে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে শিক্ষা অধিকার সংক্রান্ত কিছু দাবি পেশ করার জন্য উপাচার্য মহোদয়ের কাছে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে প্রকাশ্যে তাদের পেটানো হলো। স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি থেকেই তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। ছাত্রলীগের একটা ভূমিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষার অধিকার তো দূরের কথা শিক্ষাঙ্গনে কোনো রকম মতভিন্নতা বা ভিন্নমত, সমালোচনা, তৎপরতা কোনো কিছুই তারা করতে দেবে না। তারা একটা অ্যাবস্যুলুট আধিপত্য বজায় রেখে সরকারি দলের ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করবে। এর বিনিময়ে তারা সাধারণ ছাত্রদের ওপর অত্যাচার করবে, সুযোগ-সুবিধা আদায় করবে আর স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবে, নানা রকম পদ বিক্রি করার খবরও পত্র-পত্রিকায় দেখছি।
বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের যারা স্টেকহোল্ডার আছে, তারা তো সবাই বলছে এখানে কোনোভাবেই তারা ছাত্ররাজনীতি চায় না। আপনি যদি ইউজিসির বিধান দেখেন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের ছাত্র সংগঠন করা কিংবা সো-কল্ড ছাত্ররাজনীতির স্কোপ নেই। ছাত্ররাজনীতির নামে বর্তমানে যে অত্যাচার-অনাচার, নির্মম নির্যাতন, সহিংসতা চলছে এটাকে ছাত্ররাজনীতি বলা যায় কি না আগে সেই ডিবেটে আসেন। ওরা যেগুলো করে, সেসব তো ক্রিমিনাল অপরাধ। কিছু ক্ষেত্রে ফৌজদারি অপরাধ। তো এই ফৌজদারি অপরাধ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে আপনি অ্যালাউ করবেন কি না, এটাই প্রশ্ন। ছাত্ররাজনীতির নামে তারা এসব ফৌজদারি অপরাধের পরিধি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত বিস্তৃত করতে চায়।