এক মাস ধরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে এ দেশের মানুষ বেশ উদ্বিগ্নে আছে। বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন অনেকেই মোবাইল ফোনে জানতে চান, মিয়ানমারের সঙ্গে কি শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ লেগেই যাবে? যেভাবে ভারী অস্ত্রের গোলা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এসে পড়ছে, তাতে বাংলাদেশের কি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? সেনাবাহিনী কি ডেপ্লোয় হচ্ছে?
সেদিন আমার এক আত্মীয় উদ্বিগ্নচিত্তে মেসেজ পাঠিয়েছেন, ‘ভাই, অনেকে বলছে, বাংলাদেশ যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে। এটা কি ঠিক?’ উত্তরে বলেছি, ‘সম্ভাবনা কম। তবে মিয়ানমার উসকানি দিয়ে যাবে।’ এর পরদিনই ঢাকার এক দৈনিক পত্রিকার প্রধান শিরোনাম দেখলাম, ‘সংঘাতে জড়ানোর চেষ্টায় উসকানি’। ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় প্রায় ৪০টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের মিয়ানমার-বাংলাদেশে সীমান্ত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার পর বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব খোরশেদ আলম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করে মিয়ানমার ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশকে সংঘাতে জড়াতে চাইছে। তিনি আরও বলেন, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ না করলে, গোলা বাংলাদেশে এসে পড়ার কথা নয়। ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশকে সংঘাতে জড়ানোর যে চেষ্টা, বাংলাদেশ তাতে যুক্ত হবে না।’
১৬ সেপ্টেম্বর রাতে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের পাহাড়ের পাদদেশের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে মর্টার শেল এসে পড়লে ছয়জন রোহিঙ্গা আহত হয়েছেন। আহত মো. ইকবাল নামে এক কিশোরের পরে মৃত্যু হয়। এরও তিন দিন আগে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার থেকে রকেট শেল ছুড়লে ওই শেল বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এসে পড়ে। মিয়ানমারের হেলিকপ্টার ও ফাইটার এয়ারক্রাফট বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করার পর বাংলাদেশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে এনে কড়া প্রতিবাদ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ভূখণ্ডে মর্টারের যে গোলা এসে পড়েছে, তা ৮২ মিলিমিটার মর্টারের গোলা বলেই মনে হয়েছে। ৮২ মিলিমিটার মর্টারের গোলা সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৮০ মিটার পর্যন্ত যেতে পারে। সে হিসাবে বলা যায়, দুই থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার বাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই গোলা কারা নিক্ষেপ করছে? আরাকান আর্মি না মিয়ানমার বাহিনী? মিয়ানমার যদিও বলেছে, আরাকান আর্মি ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এসব গোলাবর্ষণ করেছে। মিয়ানমারের এ বক্তব্য সঠিক কি না, তা যাচাইসাপেক্ষ। তবে হেলিকপ্টার থেকে যে রকেট শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, হেলিকপ্টারটি মিয়ানমার বাহিনীরই ছিল। কারণ আরাকান আর্মির কোনো হেলিকপ্টার নেই। মিয়ানমারের এ হেলিকপ্টার বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছেই আরাকান আর্মির অবস্থানের ওপর গোলাবর্ষণ করে। সে হিসাবে বলা যায়, সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে দু-তিন কিলোমিটার অভ্যন্তর এলাকাজুড়ে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার বাহিনীর ব্যাপক যুদ্ধ চলছে।