 
                    
                    জনসংখ্যানীতি, উন্নয়ন এবং 'থ্রি জিরো এজেন্ডা'
জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে দেশে 'জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২' এর প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে আমরা দেখেছি, দেশের বর্তমান জনসংখ্যা সাড়ে ১৬ কোটি। এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেতে হয়তো আমাদের আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। প্রাথমিক প্রতিবেদনে এটা স্পষ্ট, দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে। স্বাধীনতার পর থেকেই জনমিতি যে প্রবণতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা ইতিবাচক বলে আমি মনে করি। কিন্তু জনসংখ্যাকে শুধু সংখ্যার নিরিখে দেখলেই চলবে না। একে জনসম্পদ হিসেবে রূপান্তর ঘটানোর জন্য উন্নয়নের দিকটি গুরুত্বপূর্ণ। সেদিক থেকে আমাদের ১৯৯৪ সালে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-আইসিপিডি লক্ষ্যমাত্রার দিকে নজর ফেরানো আবশ্যক। সম্প্রতি পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার-পিপিআরসি এবং ইউএনএফপিএর যৌথ আয়োজনে রাজধানীতে আমরা একটি কর্মশালার আয়োজন করি। এর উদ্দেশ্য ছিল ওই কনফারেন্সের আলোকে আগামী দশকের মধ্যে জনসংখ্যা ও উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রতিশ্রুতি স্মরণ করিয়ে দেওয়া।
বস্তুত আমলাতান্ত্রিক ধারণা থেকে বেরিয়ে জনসংখ্যা নীতিকে পর্যবেক্ষণ করার ক্ষেত্রে ১৯৯৪ সালে স্থির করা আইসিপিডি লক্ষ্যমাত্রা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০১৯ সালে ওই কনফারেন্সের ২৫ বছর পূর্তিতে আইসিপিডি ২৫-এ কর্মপরিকল্পনা পরিবর্তন করে 'থ্রি জিরো এজেন্ডা' বা তিন ক্ষেত্রে হ্রাস করার পরিকল্পনা স্থির করে। এর লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে (১) অপূরণকৃত চাহিদাকে শূন্যে নামিয়ে আনা; (২) প্রতিকারযোগ্য মাতৃমৃত্যুর হারকে শূন্যে নামিয়ে আনা এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা সম্পূর্ণরূপে দূরীকরণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বাল্যবিয়ে নিশ্চিহ্নকরণ।
বলা বাহুল্য, জনসংখ্যানীতির এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা এখনও বিদ্যমান। বিশেষ করে কভিড-১৯ মহামারি সমস্যাগুলোকে আরও জটিল করে তুলেছে। জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সাফল্য অর্জনে অব্যাহত প্রতিশ্রুতি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব থেকেই বাল্যবিয়ে এবং অপরিকল্পিত গর্ভধারণের মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে দায়মুক্তির সংস্কৃতি এবং সুষ্ঠু বিচারের অভাবের ফলে লিঙ্গভিত্তিক সংহিসতা থেমে নেই। আমাদের জাতীয় জনসংখ্যানীতি ২০১২-এর কিছু দিক সংশোধন জরুরি। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য থাকলেও বর্তমানে এই খাত লক্ষ্য অর্জনে অনেকখানি পিছিয়ে পড়েছে। জনসংখ্যা নীতি নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির ওপর একমাত্রিক জোর দেওয়ার সঙ্গে বিশ্ব গড়ের তিন গুণ সিজারিয়ান জন্মহারকে মিলিয়ে দেখাও জরুরি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- দেশের উন্নয়ন
- আদমশুমারি
 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                -68f7ebaa39de2-6903ee942e8e5.jpg) 
                    
                