শূন্যরেখা ঘিরেও ছক মিয়ানমারের
মিয়ানমারের ভেতরে গোলাগুলি অব্যাহত থাকায় এখনও আতঙ্ক কাটেনি সীমান্তে। বিশেষ করে বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রু এলাকার জনজীবন পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। গতকাল সোমবারও দফায় দফায় সীমান্তের ওপারের গোলার বিকট শব্দ এপারের বাসিন্দাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। আবার কখন গোলা এসে পড়ে- আছে সেই আতঙ্কও। এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে সন্তানদের আগলে ঘুমাতে যান মা।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরের সংকট বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় উদ্বেগ-উত্তেজনা ছড়ানো নিয়ে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এর নেপথ্য কারণ খুঁজতে গেলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু দিন ধরে মিয়ানমার তাদের ভেতরের তিনটি সশস্ত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে। এগুলো হলো- আরাকান আর্মি, ওয়া আর্মি ও কাচিন ইনডিপেন্ডেন্ট আর্মি। প্রায় দেড় দশক আগে তিন সশস্ত্র সংগঠনের মধ্যে একটি চুক্তি ছিল। এটি 'নর্দান অ্যালায়েন্স' নামে পরিচিত। সম্প্রতি নর্দান অ্যালায়েন্স নাম বদল করে 'ফ্রেন্ডশিপ অ্যালায়েন্স' রাখা হয়। আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে মিয়ানমার লড়াই শুরু করার পর চুক্তি অনুযায়ী ওয়া আর্মি ও কাচিন আর্মি আরাকানকে সহযোগিতা করে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলার মুখে তাদের অভ্যন্তরের সীমান্ত এলাকায় আরাকান আর্মি শক্তি সঞ্চয় করে। দেশের ভেতরের সশস্ত্র সংগঠনকে মোকাবিলা করতে গিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করছে মিয়ানমার।
একটি হলো শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের উস্কানি দেওয়া। তুমব্রুতে শূন্যরেখায় স্থাপিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২০১৭ সালের পর থেকে চার হাজার ২৮০ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। মিয়ানমারের কৌশল হলো- সীমান্তে উত্তেজনা বাড়লে শূন্যরেখার রোহিঙ্গারা প্রভাবিত হবে। তারা পাল্টা হামলা করতে পারে। তখন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে দেশটি বলার সুযোগ পাবে- শূন্যরেখা থেকে মিয়ানমারকে লক্ষ্যবস্তু করছে তারা। এ ছাড়া সীমান্তে উত্তাপ ছড়িয়ে নিজেদের ভেতরের সশস্ত্র সংগঠনগুলোর কাছ থেকে সীমান্ত এলাকায় অবৈধ বাণিজ্যের মূল নিয়ন্ত্রণ মিয়ানমার সেনাবাহিনী নিতে চায়। দীর্ঘ দিন ধরে অভিযোগ আছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অসাধু কর্মকর্তারা সরাসরি ইয়াবা বাণিজ্যে জড়িত। তবে রাখাইনে ধীরে ধীরে আরাকান আর্মির প্রভাব বাড়ায় ইয়াবাসহ অন্যান্য চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ সশস্ত্র সংগঠনটির কাছে হারানোর ভয়ও রয়েছে মিয়ানমারের জান্তাদের। সশস্ত্র সংগঠনকে শায়েস্তা করতে গিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে একাধিক দফায় মর্টার শেল এসে পড়া ও তাদের বিমান আন্তর্জাতিক সীমারেখা অতিক্রম করা 'টেস্ট কেস' কিনা- তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের পরামর্শ বিষেশজ্ঞদের। এমনকি শূন্যরেখার অধিকাংশ রোহিঙ্গা দীর্ঘ দিন থেকে চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত- এমন অভিযোগও আছে। শূন্যরেখাকে অনেকে মাদক কারবারিদের 'ওয়্যার হাউস' ও 'বিশ্রামাগার' বলেও অভিহিত করেন। সেখানে মিয়ানমারের মোবাইল কোম্পানিগুলোর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কথা বলা যায়।