যত গর্জে তত বর্ষে কি
ফোনকলটি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে প্রশ্ন শুনতে পেলাম, দাদা, যত গর্জে তত বর্ষে কি? বললাম, প্রবাদে তো আছে, যত গর্জে, তত বর্ষে না’। কিন্তু হঠাৎ এ প্রশ্নের কারণ? ভদ্রলোক বললেন, ‘কেন, আজকের খবরের কাগজ পড়েন নাই? দ্যাখেন নাই বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস কী বলেছেন?’ বললাম, ‘হ্যাঁ দেখেছি।’ তিনি আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আমরা ঢাকার অলিতে-গলিতে মিছিল-মিটিং করব। আপনাদের ঠেকানোর কোনো ক্ষমতা থাকবে না। দেখব আপনাদের পুলিশ কজন আছে আর আমাদের কর্মী কজন আছে।’ আমি ভদ্রলোকের উষ্মা উপশম করার জন্য বললাম, ‘ঠিকই তো বলেছেন মির্জা আব্বাস। তাঁরা যদি ঢাকার অলিগলিতে মিছিল করেন, তাহলে পুলিশ তা ঠেকাবে কেমন করে?’ ওপাশের ভদ্রলোক বিএনপির সমর্থক এবং আমার পরিচিত। তিনি এবার আমার ওপর খেপে গিয়ে বললেন, ‘আপনি দেখছি আসল বিষয়টার ধারেকাছেও যেতে পারেননি। আরে ভাই, ওনারা ঢাকার অলিগলিতে মিছিলের ভয় কেন দেখায় জানেন? রাজপথে মিছিল করার সাহস নাই, সেই জন্য। আসলে মির্জা আব্বাস ব্যর্থতার আগাম কৈফিয়ত দিয়ে রাখলেন। কারণ, তিনি জানেন, তাঁরা রাজপথে বড় কোনো মিছিল করতে পারবেন না, অলিগলিতে টুকরো মিছিল করেই “সফল কর্মসূচি” সম্পন্ন করবেন।’ বলেই পুট করে লাইনটা কেটে দিলেন ভদ্রলোক।
টেবিলে থাকা ‘আজকের পত্রিকা’র ১৩ সেপ্টেম্বরের সংখ্যাটি টেনে নিয়ে খবরটি আবার পড়লাম। ওই খবরে লেখা আছে, ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দলীয় এক সমাবেশে মির্জা আব্বাস কথাগুলো বলেছেন। খবরটি পড়ে এর প্রতিক্রিয়া জানার জন্য ফোন করলাম আমার অনুজপ্রতিম এক যুবদল নেতাকে। এখানে বলে নেওয়া দরকার, বিএনপির সঙ্গে আমার এখন কোনো সম্পর্ক না থাকলেও দলটির অনেক নেতা-কর্মীর সঙ্গে সম্পর্কটা রয়ে গেছে। ওই যুবনেতা যা বলল, তা শুনে আমি হতবাক। ক্ষোভের আগুনের হলকা বেরিয়ে এল তার মুখ থেকে। বলল, ‘বড় ভাই, এদের এসব গালগপ্পো আমরা আর বিশ্বাস করি না। এরা ঘরোয়া আন্দোলনকারী। রাজপথে নামার মুরোদ নাই, তাই ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে বসে হুংকার ছাড়ে। আমি এদের এখন বলি নখদন্তহীন বাঘ। এদের কথায় বহু কর্মী রাস্তায় নেমে আজ ঘরছাড়া, সহায়-সম্বলহীন। কেউ কেউ গরাদের অন্তরালে কাটাচ্ছে দুঃসহ দিন। আন্দোলন যে এরা কতটা করতে পারবে, তা আপনিও যেমন জানেন, আমিও তেমনি জানি।’
বিএনপির কর্মী-সমর্থক ওই দুজনের কথা থেকে নেতাদের প্রতি তাঁদের আস্থার পরিমাপ করা যায়। আন্দোলন প্রশ্নে দলটির নেতা-কর্মীরা যে হতাশায় ভুগছেন, তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আর তা হবেই-বা না কেন? ১০-১২ বছর ধরে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার গণ-আন্দোলনের যে বায়বীয় আস্ফালন বিএনপির নেতারা করে চলেছেন, তা এখন সাধারণ্যে হাস্যরসের উপাদানে পরিণত হয়েছে; বিশেষ করে ‘ঈদের পরে’ শব্দ দুটি এখন উপহাসের উপমা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেই কবে থেকে বিএনপির নেতারা ‘ঈদের পরে’ আন্দোলন তুঙ্গে তোলার ঘোষণা দিয়ে আসছেন! তারপর কত ঈদ এল-গেল, কিন্তু আন্দোলনের দেখা মিলল না। এ নিয়ে বিএনপির কর্মীদের সঙ্গে কথা বললেই তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলেন, ‘আন্দোলন? ওটা তো ঈদের পরে হবে।’ আমার এলাকার বিএনপির জুনিয়র এক নেতা একদিন আফসোস করে বলছিলেন, ‘যে দল তাদের নেত্রীর মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে একটি গণমিছিল করতে পারে না, সেই দল করবে আন্দোলন, আর আমরাও তা চর্মচক্ষে দর্শন করব!’