তিনি কখনো সহমত পোষণ করতে বাধ্য করেননি

দেশ রূপান্তর ড. এম এ মোমেন প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৩৭

যুগপৎ ইতিহাস ও অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবেই আকবর আলি খানকে আমার প্রথম চেনা ১৯৮৫ সালে। পৃথক ক্লাসে নয়, একই ক্লাসে। প্রথম ক্লাসেই বললেন, স্বল্পশিক্ষিত রাজনীতিবিদ এবং কল্পপ্রবণ কবি-সাহিত্যিকরা যে বলে থাকেন এ বাংলা সোনার বাংলা ছিল, তা সম্পূর্ণ ভুয়া। ইবনে বতুতা যা দেখেছেন আর যা বর্ণনা করেছেন রাজকীয় খানাপিনা, সোনাদানা আর বিছানা ঝলসে দেওয়া নারী এত যে সস্তা, তা কখনো ভালো অর্থনীতির কোনো সূচক হতে পারে না। এসবের যতই সরবরাহ থাকুক, মূল্য যত কমই হোক কোনোকিছুই সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ছিল না। শুধু তাই নয়, একবেলা করে খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য বাংলার মানুষ স্ত্রী ও সন্তানকে বিক্রি করেছে। এমনকি নিজেকেও বিক্রি করেছে এক টাকা কি দেড় টাকায়। সুতরাং আকবর আলি খান উপসংহার টানলেন: ‘সোনার বাংলা’র প্রশ্নে এতদিন যা শুনেছেন, পড়েছেন এবং শিখেছেন  ভুল শুনেছেন, ভুল পড়েছেন, ভুল শিখেছেন।


ক্লাসের বাইরে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার সময় তার পড়ানোর এই পদ্ধতিটাকে বললেন ‘ঝাঁকরান’ পদ্ধতি ঝাঁকি দিয়ে নেড়ে পুরনো বিদ্যা বের করে নতুনভাবে বিশ্লেষণ করা শিখতে হবে। অল্পদিন আগে ১৮ আগস্ট ২০২২ দেশ রূপান্তরে আমি আকবর আলি খানের অর্থনীতি পাঠের একটি বর্ণনা দিয়েছি : ১৯৮৫ সালে মোরগের দাম ৫০ টাকাই ছিল। আকবর আলি খান মুদ্রাস্ফীতি ও টাকার বাজারে ধস বোঝাতে গিয়ে বললেন, হাতে পঞ্চাশ টাকা থাকলে মোরগটি আজই খেয়ে নিন; বেশি দেরি করলে ৫০ টাকায় একটা শুধু রান পাবেন; আরও দেরি করলে ৫০ টাকায় মোরগের ছবি কিনতে হবে। সময় ও সুযোগ পেলে আমিও মাস্টারি করি টের পাই অবচেতনে তার পড়ানোর শৈলী আমি অনুসরণ করছি। কেবল শৈলীটাই, তার সেই অগাধ পা-িত্য আমার নেই, যেটুকু আছে তা কাজে লাগিয়ে অনেক বিষয়ে তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছি এবং আমাকে অর্বাচীন ভেবে থাকলেও তিনি আমাকে তার সঙ্গে সহমত পোষণ করতে বাধ্য করেননি।


১৯৯৬ সালে তার লেখা ডিসকভারি অব বাংলাদেশ প্রকাশিত হলে সানন্দে ক্রয় করি এবং কুইনস বিশ^বিদ্যালয়ে দাখিল করা তার পিএইচডি থিসিসটির প্রতিও আগ্রহী হয়ে উঠি। সাম আসপেক্টস অব পেজেন্ট বিহেবিয়র জোগাড় করি। তার বিচ্ছিন্ন লেখা কেটে জমিয়ে রাখি। আমার স্বাভাবিক কৌতূহল থেকে একদিন তাকে জিজ্ঞেস করি, স্যার, বই প্রকাশের আগে আপনি কি সরকারের অনুমতি নিয়েছেন?


ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি জিজ্ঞেস করেন, আমাকে এ প্রশ্ন কেন করছেন? আমি বলতে চাচ্ছিলাম আমাদেরও কেউ কেউ লিখেটিখে থাকেন, কিন্তু আমাদের জানানো হয়েছে সরকারের অনুমতি না নিয়ে বই প্রকাশ করা যাবে না। আমার জবাবটি দিতে হয়নি। তিনি তার স্বর অক্ষুন্ন রেখে বললেন, এজেডএম ওবায়দুল্লাহ খানও (ডাকসাইটে আমলা এবং ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কাব্যগ্রন্থের কবি) কখনো অনুমতি নেননি।


আমি বললাম, থ্যাঙ্ক ইউ স্যার, উত্তর পেয়ে গেছি।


চাকরি জীবনে আমি অবসরের বয়স স্পর্শ করা কর্মকর্তাদের এক্সটেনশন প্রাপ্তির বিরোধিতা করেছি এবং আমাদের বিরোধিতার কথা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন থেকে তাকেও জানিয়েছি। তিনি সাড়া দিলেন ভিন্নভাবে। বললেন, এটা সরকারের এখতিয়ার, সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কোনো বিষয় নয়। সুতরাং ক্ষুব্ধ হয়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের উঞ্ছবৃত্তি নামে একটি লেখা প্রকাশ করে তাতে আশঙ্কার কথা লিখলাম, আকবর আলি খানও কি এক্সটেনশন চাইবেন? লেখাটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সজ্জন অতিরিক্ত সচিব আফতাব উদ্দিন খানের হাতে পড়লে আমাকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সম্ভাব্য রোষ থেকে রক্ষা করতেই লেখাটি আকবর আলি খানকে দেখিয়ে বললেন, স্যার এটা ইননোসেন্ট লেখা, এক্সটেনশনের বিরুদ্ধে একটা কমন সেন্টিমেন্ট তুলে ধরেছে। এমনিতে ছেলেটি ভালো।


তিনি জবাব দিয়েছিলেন, আমি চিনি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও