শনিবার বিকেল: আটকে থাকা অনন্ত বিকেল
'শনিবার বিকেল'। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সপ্তম চলচ্চিত্র। ফারুকী যে ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন এইটাও সেই ধরনের চলচ্চিত্র বলা চলে। অর্থাৎ অনেক আলোচনা চলচ্চিত্রের মুখ্য বিষয়। শনিবারের বিকেলও সেই ধরনের চলচ্চিত্র। হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা নিয়ে এই চলচ্চিত্র।
নাম 'শনিবার বিকেল' হলেও হলি আর্টিজানে হামলা হয়েছিল ১ জুলাই ২০১৬, শুক্রবার, রাত ৯টা ২০ মিনিটে। ৯ হামলাকারী ঢাকার গুলশানের এই বেকারিতে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল।
চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের দর্শকদের দেখার সুযোগ হয়নি। বিশেষভাবে কয়েকজন দেখেছেন। প্রায় সাড়ে ৩ বছর ধরে এটি সেন্সর বোর্ডে আটকে আছে। কেন আটকে আছে সেই প্রশ্ন ঘুরে-ফিরে আসছে। এ বিষয়ে এতদিন পর সদুত্তর মেলে গত ২৯ আগস্ট।ৎ
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, 'হলি আর্টিজানে যে হামলা হয়েছিল, সেই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে এই সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে দুজন পুলিশ অফিসার মারা গেছেন এবং আমাদের পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে জঙ্গিদের দমন করেছিল। সেন্সর বোর্ডের অভিমত, সেই বিষয়গুলো সিনেমাটিতে আসেনি। সেজন্য এই দৃশ্যগুলো সংযোজন করতে বলা হয়েছে। সেটি তারা কিছুটা করেছে বলে আমাকে জানিয়েছে। কিন্তু, সেটিও যথেষ্ট নয়।'
প্রশ্ন হলো, একটি চলচ্চিত্রে কী থাকবে আর কী থাকবে না তা পরিচালক নির্ধারণ করবেন। সেই চলচ্চিত্র যদি বাংলাদেশ পুলিশের অর্থায়নে নির্মিত হয় তবে তাতে পুলিশের বীরত্বের বিষয়টি হবে মুখ্য। চলচ্চিত্র বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে নির্মাণ করা যায়। কে, কোন অ্যাঙ্গেল পছন্দ করবেন তা পরিচালকের ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয়। এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা শোভন নয়। এতে পরিচালকের গল্প বলার স্বাধীনতা খর্ব হয়। পরিচালক অসহায় বোধ করেন। প্রশ্ন হলো, কেন পরিচালককে এইরকম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলা হচ্ছে?
প্রশ্ন এখানেই শেষ নয়। হলি আর্টিজানের হামলা নিয়ে ভারতীয় পরিচালক হানসাল মেহেতা চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন। এর নাম 'ফারাজ'।
ফারাজের গল্প ও হলি আর্টিজান হামলার সময় তার ভূমিকা সম্পর্কে আমরা জানি। এখন হানসাল মেহেতাকেও কি একই প্রক্রিয়ায় বলা হবে, আপনার চলচ্চিত্রে এসব বিষয় নেই। আপনি এসব বিষয় যুক্ত করুন তারপর চলচ্চিত্র মুক্তি দেওয়া হবে? নিশ্চয়ই না।
হানসাল মেহেতাকে কোনোকিছুই বলার সুযোগ পাবে না বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। তিনি যদি গোটা চলচ্চিত্রে বাংলাদেশকে জঙ্গি দেশ হিসেবে তুলে ধরেন তাও কি কিছু বলার সুযোগ আছে? নেই। তাহলে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ক্ষেত্রে কেন এই আদেশ?