‘সেন্সর’ ও ‘কন্ট্রোল’

www.ajkerpatrika.com মামুনুর রশীদ প্রকাশিত: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:৩৫

‘সেন্সর’ ও ‘কন্ট্রোল’ দুটি শব্দই ইংরেজি এবং দুটি শব্দই ঔপনিবেশিক। ইংরেজ শাসনকার্য চালানোর জন্য প্রথম থেকেই উপনিবেশগুলোতে এই শব্দ দুটি চালু করে। সংবাদপত্রে, সভা-সমিতিতে সর্বত্রই সেন্সরের মাধ্যমে জনমতকে রুদ্ধ করার একটা নিয়ম চালু করা হয়। বিভিন্ন ঔপনিবেশিক যুদ্ধে পরাজয়ের কোনো সংবাদ লোকমুখেও যেন প্রচারিত না হয়, তার একটা ব্যবস্থা প্রথম থেকেই তারা করে ফেলেছিল। যুদ্ধে কতজন ইংরেজ মারা গেল, তা জানার উপায় ছিল না। কতজন দেশীয় বিদ্রোহী মারা গেল, তাতে রং ছড়িয়ে বেশ ফলাও করে প্রচার করা হতো। এই সেন্সর ও কন্ট্রোলের মাধ্যমে কখনো কখনো জনগণের মধ্যে এমন ভীতির সঞ্চার করত যে পোড়া লালমুখো সৈন্যদের ভয়ে জনগণ সিঁটিয়ে থাকত। এতে তাদের একের পর এক যুদ্ধ জয়ের জন্যও সুবিধা হয়েছিল।


কলকাতায় ইংরেজদের শোচনীয় পরাজয়ের পর যখন নবাব সিরাজউদ্দৌলা মুর্শিদাবাদে চলে গেলেন, তখন অন্ধকূপ হত্যার এক হৃদয়বিদারক কাহিনি তারা নির্মাণ করে ফেলেছিল এবং কিছুদিন আগপর্যন্ত এটি বিশ্বাস না করে উপায় ছিল না। কিন্তু তথ্যের অবাধ প্রবাহের ফলে এখন দেখা যাচ্ছে পুরো বিষয়টি একটা মিথ্যা শুধু নয়, খুবই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে দীর্ঘ দীর্ঘ যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে তারা মিথ্যা প্রচার শিখেছিল এবং সেন্সর ও কন্ট্রোলের মাধ্যমে তারা প্রচারকার্যটি খুব সূক্ষ্মভাবে করতে পারত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অবশ্য হিটলার সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। হিটলারের অনুচর গোয়েবলস আবিষ্কার করেছিল, দশটি মিথ্যা বললেই কালক্রমে তা সত্য হয়ে যায়! ইংরেজ সেদিক থেকে আরেক ধাপ এগিয়ে। তারা নানা ধরনের কালাকানুনের মাধ্যমে আইনগতভাবে সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা করত এবং দেশবাসীর মতামত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করার নতুন নতুন পথ আবিষ্কার করেছিল।


সংবাদপত্র ও বই প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই খড়্গ ধরেছিল ইংরেজ। যেকোনো বই বা পত্রিকা প্রকাশ হলে তার পাঁচ কপি সরকারের একটি বিশেষ বিভাগে জমা দিতে হতো। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে গ্রামগঞ্জে নানান ধরনের কবিতা, ছড়া, যাত্রাপালা, পালাগান এবং লোকসংগীতকে আশ্রয় করে নানা ধরনের শৈল্পিক প্রতিবাদও যুগ যুগ ধরে অব্যাহত ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে আমরা যাকে রেনেসাঁ বলি, সেই সময় যে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবাদ সংগঠিত হচ্ছিল, তাতেও ইংরেজ একটু ঘাবড়ে গিয়েছিল। একদিকে ভাষা এবং মুক্তচিন্তার বিকাশ হচ্ছিল, সাহিত্যে বড় বড় প্রতিভা এসেছিল এবং কিছুটা পাশ্চাত্যের প্রভাবে নাট্যসাহিত্য একটা উত্তরণের পথ পেয়েছিল।


সেই সময়ে ‘নীল দর্পণ’ নাটকটির রচনা এবং অভিনয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শিল্পী-সাহিত্যিকেরা সব সময়ই সমাজে একটি অগ্রগামী অংশ হিসেবে তাঁদের ভূমিকা পালন করেছেন। নাটক সাহিত্যের জন্য যতটা নয়, একটি প্রচারমাধ্যম হিসেবে তার স্থান করে নেয়। প্রথমে পৌরাণিক ধর্মবিষয়ক এবং পরে সামাজিক সমস্যাগুলো নাটকে প্রধান উপজীব্য হয়ে দাঁড়ায়। একদিকে গ্রামগুলোতে কাহিনিনির্ভর যাত্রাপালা আর অন্যদিকে শহরগুলোতে, বিশেষ করে মোকাম কলকাতায় থিয়েটার চালু হয়ে যায়। এই থিয়েটার চালু করার পেছনে অবশ্যই উঠতি বেনিয়াশ্রেণির পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। কিন্তু শিল্পীরা সুকৌশলে ঔপনিবেশিক শাসনবিরোধী নাটক নির্মাণ করে দেশপ্রেমিক মধ্যবিত্তদের চিন্তার প্রতিফলন ঘটান।


১৮৭২ সালে কলকাতায় পাবলিক থিয়েটারের সূচনা হয়। এই সময়ে ভারতবর্ষের শাসনভার ইংল্যান্ডের রাজন্য হাতে তুলে নেয়। সোনার খনি ভারতবর্ষে ইংরেজ রাজন্যদের আসা-যাওয়া বাড়তে থাকে। শিল্পবিপ্লবের পর ইংল্যান্ডে নানা ধরনের সামাজিক বিপ্লব রাষ্ট্রব্যবস্থাকে কখনো কখনো অস্থির করে তোলে। ইউরোপে বিপ্লবীদের আস্তানা গড়ে ওঠে খোদ ইংল্যান্ডে। সেই সঙ্গে পাশ্চাত্যের সাহিত্যে অনুপ্রবেশ ঘটে গেছে ভারতবর্ষে। স্বয়ং কার্ল মার্ক্স তখন লন্ডনে বসে কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো রচনা করছেন, ইউরোপ তখন কমিউনিজমের ভূত দেখেছে। এর আগেই ফরাসি বিপ্লব হয়ে গেছে। যার মূলমন্ত্র ছিল মুক্তি, সাম্য এবং চিন্তার স্বাধীনতা। ফরাসি বিপ্লবের ঢেউ ইউরোপ ছাড়িয়ে সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছিল।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও