বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারাই আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলভিত্তি

যুগান্তর ড. দেলোয়ার হোসেন প্রকাশিত: ২২ আগস্ট ২০২২, ০৯:৩০

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কূটনীতি। আধুনিক বিশ্বে একটি জাতি বিনির্মাণ, একটি রাষ্ট্র সৃষ্টি ও বিকাশের পেছনে রয়েছে কূটনীতির অসাধারণ ভূমিকা। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশের মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রশ্নে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছিল। স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক, দার্শনিক ও মতাদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ব্যাপক বিশ্লেষণ ও গবেষণা হলেও বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ততটা গবেষণা হয়নি। অনস্বীকার্যভাবে বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারা ছিল গভীর, অনন্য ও অসাধারণ। বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু রচিত ‘আমার দেখা নয়াচীন’ (২০২০) একটি অসামান্য দলিল। বঙ্গবন্ধু রচিত অন্য দুটি গ্রন্থে অসমাপ্ত আত্মজীবনী (২০১২) ও কারাগারের রোজনামচায় (২০১৭) বঙ্গবন্ধুর বিশ্বদর্শন ও পররাষ্ট্র চিন্তার দুর্লভ প্রমাণ রয়েছে। এগুলো গবেষকদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। প্রচলিত অর্থে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা, সাক্ষাৎকার, বিবৃতি, সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে নানাবিধ সিদ্ধান্ত ও দিকনির্দেশনা বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারার অন্যতম উৎস হিসাবে বিবেচিত।


বলাবাহুল্য, বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারাই স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূলভিত্তি রচনা করেছে। ১৯৭১ সারের ২৬ মার্চ হানাদার পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক গ্রেফতার ও পরে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির মিয়ানওয়ালি কারাগারে অন্তরিন অবস্থা থেকে ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে মুক্তিলাভের পর থেকে প্রতিটি মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু গভীর কূটনৈতিক চিন্তাধারার প্রতিফলন তুলে ধরেন। ৮ থেকে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকালেই বঙ্গবন্ধু বিস্ময়করভাবে এক মহান কূটনীতিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের অগ্রদূত বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাপ্রকোষ্ঠ থেকে মুক্তিলাভের পর লন্ডনে যাত্রাবিরতি করে দিল্লি বিমানবন্দরে ভারতীয় সরকার ও জনগণ কর্তৃক সংবর্ধনা গ্রহণ করে লাখ লাখ অপেক্ষমাণ বাঙালির মাঝে আবহমান বাংলার মাটিতে পদার্পণের যাত্রাকালটি একটি দুর্লভ আন্তর্জাতিক ঘটনা, যা সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পররাষ্ট্রনীতির জন্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। লন্ডন ও দিল্লিতে বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া হয় সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড হিথ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্ধিরা গান্ধী কর্তৃক বঙ্গবন্ধুকে সাদরে গ্রহণ বিশ্বপরিমণ্ডলে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশকে অনেক উঁচুতে তুলে ধরে।


বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে, বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক চিন্তাধারার অসাধারণ ও বিস্ময়কর প্রতিফলন ঘটে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি লন্ডনের সংবাদ সম্মেলনে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি শব্দ হয়ে ওঠে বিশ্বনেতার বক্তব্য। সদ্যস্বাধীন জাতির মুক্তিপাগল মানুষের হৃদয়ের কথা। বিশ্বের নিপীড়িত অসহায় মানুষের আর্তনাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। পৃথিবীর অগণিত শান্তিকামী মানুষের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য ও বিশ্বনেতাসুলভ আচরণ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে। বঙ্গবন্ধুর আত্মবিশ্বাস, সাহস, দৃঢ়তা, বিচক্ষণতা ও বাঙালি জাতির প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা পরবর্তীকালে প্রতিটি কূটনৈতিক ঘটনায় প্রতিফলিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সহায়তাকারী রাষ্ট্রগুলো, যেমন ভারত ও তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও পশ্চিম জার্মানির জনগণকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রায় নয় মাস কারাবন্দি ও প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা গ্রেট ব্রিটেনের জনগণকে ধন্যবাদ জানানো একটি সাহসী ও কঠিন পদক্ষেপ। কারণ এ দেশগুলোর সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। বিশ্বের কাছে বঙ্গবন্ধুর চাওয়া ছিল সার্বভৌম বাংলাদেশকে দ্রুত স্বীকৃতি প্রদান। পাশাপাশি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও ছিল, যা তিনি মানবতার দায়িত্ব হিসাবে আখ্যায়িত করেন। লন্ডনের হোটেল ক্লারিজে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের আগে বঙ্গবন্ধু ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে দেখা করেন। হিথের সঙ্গে বৈঠকে বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ সরকারের সমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপের এক পর্যায়ে হিথ বলেন, ‘আপনার জন্য আমরা আর কী করতে পারি?’ সদ্য কারামুক্ত এবং কঠিন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এ সৌহার্দপূর্ণ আচরণ অতুলনীয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও