‘শিখিয়ে দেওয়া কথা না বললে ক্রসফায়ার’
একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ১৮ বছর পার হলেও বিচার কাজ শেষ হয়নি। মামলাটি এখন ডেথ রেফারেন্সের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট জঙ্গিগোষ্ঠী গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২২জন মানুষকে হত্যা করে।
বিএনপি সরকার এই হামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে জজমিয়া নাটক সাজিয়েছিল। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসে। আওয়ামী লীগ আমলে পুনঃ:তদন্ত ও বিচার কাজ শুরু হয়। শাস্তি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত বিচারকাজ শেষ হয়েছে বলা যায় না। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শোনার জন্য বেঞ্চ নির্ধারণের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানির প্রস্তুতি হিসেবে পেপারবুক বা মামলার বৃত্তান্তও প্রস্তুত।
২০০৪ সালে যখন এই গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে, তখন বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় ছিল, এ জন্য তাদের কেউ দায়ী করছে না। তাদের আমলে আরও অনেক জঙ্গি হামলা হয়েছে। সেসব ঘটনায় বিএনপির সম্পৃক্ততার অভিযোগ কেউ করেননি। ২১ আগস্টের হামলায় কেন এ অভিযোগ এল? এ হামলার সঙ্গে বিএনপির একাধিক নেতা-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে মামলার তদন্ত ও সাক্ষ্যে। বিএনপি নেতৃত্বের পক্ষ থেকে সেসব খণ্ডন করা হয়নি। অনেক প্রশ্নের জবাবও মেলেনি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা যখন ঘটে, তখন আমি সংবাদ-এ কাজ করি। দিনের কাজ শেষে যখন পুরানা পল্টনের অফিস থেকে বের হই, তখনই জানতে পারি, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা হয়েছে।
তখনো কেউ জানেন না, কারা এই হামলা চালিয়েছে। হেঁটে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের দিকে যেতেই দেখি, রক্তে ভেজা রাজপথ আর মানুষের ছিন্নভিন্ন দেহ। শত শত জুতা-স্যান্ডেল পড়ে আছে। সেই ধ্বংসস্তূপের ভেতর তখনো কেউ কেউ কাতরাচ্ছিলেন, সাহায্যের জন্য আহাজারি করছিলেন। সাধারণ মানুষ, সেখানকার দোকানদার, রিকশাচালক ও পথচারীরা আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছেন। হামলার একপর্যায়ে তাঁরা কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়লে চারদিকে ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। হামলাকারীদের পালানোর পথ করে দেওয়ার জন্যই সেটি করা হয়েছিল। পরে সেখান থেকে গ্রেনেড হামলার আলামতও সরিয়ে ফেলা হয়।
আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা যে ট্রাকে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, সেই ট্রাক লক্ষ্য করেই দুর্বৃত্তরা প্রথম গ্রেনেডটি ছোড়ে। দলের নেতা-কর্মীরা ট্রাকের ওপরই শেখ হাসিনার চারপাশে মানববর্ম তৈরি করেছিলেন, যার ছবি পরের দিন প্রায় সব কাগজে প্রকাশিত হয়। হামলার মুখে যখন দলীয় নেতা-কর্মীরা শেখ হাসিনাকে গাড়িতে তুলে দেন সেখান থেকে নিরাপদে কোথাও চলে যাওয়ার জন্য, তখন সন্ত্রাসীরা সেই গাড়ি লক্ষ্য করেও কয়েক দফা গুলি ছোড়ে। জঙ্গিদের হামলা থেকে শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন মারা যান। আহত হন কয়েক শ।