জিয়া এবং বেগম খালেদা জিয়ার চোখে বঙ্গবন্ধু
সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে এর সুবিধাভোগী তৎকালীন ডেপুটি আর্মি চিফ জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মনোভাব কী ছিল তা সবচেয়ে ভালো জানবেন তাদের ঘনিষ্ঠ সহকর্মীরা। বিএনপির এমন দুই সিনিয়র নেতার লেখায় তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে।
বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান, সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাফিজউদ্দিন আহমেদ ৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঢাকার ৪৬ ব্রিগেডের ব্রিগেড মেজর ছিলেন। ‘সৈনিক জীবন-গৌরবের একাত্তর রক্তাক্ত পঁচাত্তর’ নামে লেখা তার আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি অধ্যায় রয়েছে। জনাব হাফিজের নিজের ভাষায়– ‘ওই হত্যাকাণ্ড ছিল অভাবনীয় এবং বড় প্রলয়ংকরী ঘটনা।…বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত। রাষ্ট্রপতিসহ তিনটি বাড়িতে পাইকারি হারে হত্যাকাণ্ড, রেডিও-টিভি স্টেশন দখল, ব্যাংক মুভমেন্ট, এত বড় ঘটনা ঘটার আগে কেউ টের পেলো না, গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ কিছুই জানতে পারেনি–এটা অবিশ্বাস্য… অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকায় স্বাভাবিক ঘটনা। সাধারণত পরাশক্তির যোগসাজশেই এমন ঘটনা ঘটে থাকে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলের অনেকের ধারণা ১৫ আগস্টের ঘটনায় আমেরিকা মদদ দিয়েছে। তবে রাজনৈতিক নেতাদের যেভাবে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে সেটি সবাইকে স্তম্ভিত করেছে।’
কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পরপরই খবরটি জানতে পেরে ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল শাফায়াত জামিলের সঙ্গে সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ ডেপুটি আর্মি চিফ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের বাসায় গিয়ে তাকে খবরটি জানানোর পর তার মধ্যে কোনও ভাবান্তর দেখেননি তারা। জনাব হাফিজ ঘটনার বিবরণ দেওয়া ছাড়া এ নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও এই বিবরণ থেকে খুবই স্পষ্ট যে, কতিপয় সেনা কর্মকর্তার হাতে দেশের প্রেসিডেন্ট খুন হওয়ার খবর শোনার পরও ডেপুটি চিফের স্বাভাবিক যে প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা তা তার মধ্যে একেবারেই দেখা যায়নি, বরং তিনি ছিলেন অবিশ্বাস্য রকম ধীর-স্থির, যেন পরবর্তী করণীয় ঠিক করে রেখে এ খবরটির জন্যই অপেক্ষা করছিলেন তিনি।
হাফিজ লিখেছেন, ‘কল বেল টিপলে জিয়া নিজেই দরজা খুলে দিলেন। তার পরণে সাদা পাজামা, সাদা হাফ হাতা গেঞ্জি, শেভ করছিলেন, মুখে সাদা শেভিং ক্রিম, কাঁধে তোয়ালে। আমাদের দেখে বললেন, হোয়াট হ্যাপেন্ড? ‘স্যার প্রেসিডেন্ট হ্যাজ বিন কিলড, মেজর রশীদ এসে আমাকে জানিয়ে গেল’– শাফায়াত বললেন। ‘সো হোয়াট? প্রেসিডেন্ট হ্যাজ বিন কিলড, ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার, উই উইল আপহোল্ড দ্য কনস্টিটিউশন’–জিয়ার মন্তব্য।’
২৪ আগস্ট জেনারেল শফিউল্লাহ’কে সরিয়ে জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করা হয়। হাফিজ লিখেছেন, বছর দেড়েক আগে জিয়ার পিএস থাকার সময় তিনি তাকে বলেছিলেন আওয়ামী লীগ সরকার তাকে কখনও সেনাপ্রধান করবে না। প্রমোশন পেয়ে জিয়া হাফিজকে ফোন করে বলেন, ‘তুমি ঠিকই বলেছিলে, শেখ সাহেব কখনো আমাকে চিফ বানাবেন না।’
- ট্যাগ:
- মতামত
- বঙ্গবন্ধু হত্যা