কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

মানুষের সহ্যশক্তিরও একটি সীমা থাকে

যুগান্তর একেএম শাহনাওয়াজ প্রকাশিত: ১৬ আগস্ট ২০২২, ০৯:৫৩

দিন কয়েক আগে একটি টিভি চ্যানেলে সংবাদপত্র পর্যালোচনা করছিলাম। নিত্যপণ্যের বাজারে যে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে, সে প্রসঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন রাখলেন উপস্থাপক। জানাতে বললেন আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা। আমি বলেছিলাম, বাজারের দায়িত্বটি গৃহকর্ত্রীর। তাপ-উত্তাপটা তিনি ভালো অনুভব করেন। গতকাল তিনি মাসের বাজার করে ফিরলেন। অসহায়ের মতো বললেন, তিনি জানতেন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা। তাই বাজেট বাড়িয়েই বাজারে গিয়েছিলেন। সব মাসের মতোই বাজার তালিকা ছিল। বললেন বাজেটের টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার পর ব্যাগের গোপন পকেটে হাত দিতে হলো। বিপদ-আপদের জন্য সেখানে কিছু সঞ্চয় ছিল, সেটিও উড়ে গেল বাজারের দমকা হাওয়ায়।


বাজার ঘুরে এসে যে অভিজ্ঞতা হলো, তাতে গৃহকর্ত্রী চিন্তিত হয়ে পড়লেন নিম্নআয়ের মানুষদের নিয়ে। মধ্যবিত্তের যেখানে নাভিশ্বাস, সেখানে নিম্নআয়ের মানুষ কতটা কষ্টে আছে বোঝা যায়। সেদিনের সংবাদপত্রটি টেবিলে ছিল। তাতে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ছবি। নিচে তার বক্তব্য দিয়ে হেডিং করা হয়েছে। দেশবাসীর যাপিতজীবন বা অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে সম্ভবত তিনি সরলভাবে বলেছেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে। পরে মন্ত্রী মহোদয় ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি মুদ্রাস্ফীতির তুলনা করে বলেছেন। আমাদের মনে হয়েছে, যাহা বায়ান্ন তাহাই তেপ্পান্ন। আমি সংগোপনে গৃহকর্ত্রীর দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে গেলাম পত্রিকাটি। সদ্য বাজার ফেরত মানুষের অমন হেডিং পড়ে কী প্রতিক্রিয়া হয় কে জানে!


মন্ত্রী মহোদয়ের মন্তব্য পড়ে আমার কেন যেন ফরাসি বিপ্লবের সময়ের কথা মনে হলো। বিপ্লবীরা রাজপ্রাসাদের বাইরে স্লোগান তুলছে। ফরাসি সম্রাট ষোড়শ লুইয়ের রানি জানতে চাইলেন কৃষক এত হইচই করছে কেন। প্রহরীরা জানালো রুটির অভাবে ওরা আন্দোলন করছে। তখন এমনি সরলভাবে রানি উত্তর করলেন, রুটি নেই তাতে কী! ওদের কেক খেতে বল!


বেহেশতে বসবাস করে কি দোজখের উত্তাপ অনুভব করা যায়? রানি হয়তো কাছে থেকে কখনো সাধারণ মানুষের কষ্ট অনুভব করতে পারেননি। তাই তার মন্তব্যকে বিদ্রুপ মনে না করে সরল উক্তিই ভাবা যেতে পারে। আমাদের দেশের কোনো কোনো দায়িত্ববান নাকি বলেন, দেশে কি মানুষ না খেয়ে মরেছে? শুনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কথা মনে হয়েছিল। এখন বোধহয় কাদম্বিনীদের ‘মরিয়া প্রমাণ করিতে হইবে তাহারা মরে নাই।’


আমি তো বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ অনেক সহনশীল। বাস্তবতা তারা বিবেচনা করতে জানে। মানুষ জানে বর্তমানের বৈশ্বিক সংকটের কথা। করোনার আঘাতে ব্যক্তিক ও সামষ্টিক সংকটে ভুক্তভোগী মানুষ। সরকারও নানাভাবে চেষ্টা করেছে যতটা সম্ভব দুর্ভোগ কমিয়ে আনতে। আমরা অনেকেই সংকট মোকাবিলা করে টিকে আছি। নিম্নআয়ের মানুষ অনেকেই কর্মহীন হয়ে বিপদে পড়েছিলেন। তাদের কেউ কেউ এখনো কাজে ফিরতে পারেননি। অনেক বেসরকারি স্কুল ও কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা স্কুল কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানবেতর জীবন কাটিয়েছিলেন। এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। বেতন বৃদ্ধির আনন্দে ও স্বস্তিতে থাকা মধ্যবিত্ত চাকুরে করোনা ও করোনা-উত্তরকালে নিত্যপণ্যের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধিতে সংসারের বাজেট ঠিকমতো মেলাতে পারছিলেন না।


এমন বাস্তবতায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক আঘাত বিপর্যস্ত করে তুলছে সাধারণ মানুষের জীবন। এমন সংকটেও বাস্তবতা অনুভব করে মানুষ সহ্য করে যাচ্ছিল; কিন্তু সরকারি অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি তৈরি করছে বড় ধরনের সংকট। বিপন্ন সাধারণ মানুষ দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষক বলে দুষছে সরকারকে। সাধারণ মানুষের কঠিন জীবনধারা থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা ক্ষমতাবান সুখী মানুষ তাদের প্রতিদিনের নতুন নতুন বাণীতে ফরাসি রানির মতো কৌতুকের উপাদান ছড়াচ্ছেন; কিন্তু এর ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়ার কথা ভাবছেন না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও