বঙ্গবন্ধু হত্যা ও আশ্রয়ের সন্ধানে ঘাতক মেজররা
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে যা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই সেনা অভ্যুত্থান ছিল না; ছিল প্রতিহিংসামূলক হত্যাকাণ্ড ও ষড়যন্ত্র। সেনাবাহিনীর গুটিকয় কর্মকর্তা, যঁাদের বেশির ভাগ ছিলেন বরখাস্ত ও অবসরপ্রাপ্ত। তঁারা সপরিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেন। কিন্তু হত্যার পর তঁারা কী করবে, কীভাবে দেশ চালাবেন, তা তঁাদের মাথায় ছিল না। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের নিয়েই সরকার গঠন করে, যার নেতৃত্ব দেন বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক আহমদ। এমনকি সেনাবাহিনীর ওপর খুনিদের কর্তৃত্বও ছিল না। এ কারণে তঁারা ট্যাংকবহরের প্রহরায় বঙ্গভবনে আশ্রয় নেন।
সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ না করলেও ঘাতকদের ঔদ্ধত্য মেনে নিতে পারেননি। তঁারা সেনাবাহিনীতে চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালান। শাফায়াত জামিল প্রমুখ সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের সহায়তা না পেয়ে তৎকালীন চিফ অব জেনারেল স্টাফ খালেদ মোশাররফের শরণাপন্ন হন। তিনি তঁাদের উদ্যোগে সাড়া দিয়ে বলেন, ‘একটা কিছু করতে হবে।’ ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থান হলে ঘাতক চক্র দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়।
৪ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় খুনি চক্রের অন্যতম হোতা ফারুক রহমান ব্যাংকক বিমানবন্দরে পৌঁছে মার্কিন দূতাবাসে টেলিফোন করে সহায়তা চেয়ে ব্যর্থ হন। এরপর তঁারা পাকিস্তান দূতাবাসের সহায়তা চেয়েও সফল হননি। পরে বাংলাদেশ দূতাবাস থাই বহির্গমন ও শুল্ক বিভাগের ছাড়পত্র নেওয়ার ব্যবস্থা করে। তাঁরা থাইল্যান্ডে ১৫ দিনের থাকার অনুমতি পান।
৫ নভেম্বর মার্কিন দূতাবাস ওয়াশিংটনে জানায়, পাকিস্তান দূতাবাস খুনিদের ব্যাপারে উৎসাহ দেখায়। তবে ব্যাংককের রয়টার্স সংবাদদাতা রজার্স পাকিস্তান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি খালিদ নিজামির উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, পাকিস্তানে এই কর্মকর্তাদের আশ্রয় দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
যুক্তরাষ্ট্রও মেজরদের আশ্রয় দেওয়ার বিরোধী। ৬ নভেম্বর ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্যাক্সবি পররাষ্ট্র দপ্তরে পাঠানো বার্তায় জানান, ‘আমি আনন্দিত যে বাংলাদেশ ত্যাগ করা মেজররা এখনো যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের আবেদন করেননি। আশা করি, তাঁরা যা-ই করুন না কেন তা প্রত্যাখ্যাত হবেন। এই লোকগুলোর হাতে রক্ত আছে। তিনি এ ব্যাপারে সজাগ ছিলেন যে মেজররা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পেলে ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাবে। শেখ মুজিব নিহত হওয়ার পরপরই ভারত সরকারের কেউ কেউ মনে করেছেন, এই অভ্যুত্থানের সঙ্গে আমাদের যোগসাজশ আছে।...আমি কোনো কারণ দেখি না যে এসব লোককে আমরা আশ্রয় দিয়ে নিজেদের কাঁধে বোঝা নেব, যাঁদের কৃতিত্ব হলো বাংলাদেশের নেতৃত্বের একটি ভালো অংশকে নির্মূল করে দেওয়া।’