টানা দুই বছরের অধিক সময় কভিড-১৯-এর ধাক্কা সামলে বিশ্ব অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, ঠিক সেই সময়ে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ গোটা বিশ্বে এক নতুন অভিঘাত নিয়ে এসেছে। গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছেছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা দিয়েছেন আপাতত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই হবে সর্বাধিক অগ্রাধিকার। গত মার্চে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার খাদ্য মূল্যসূচক গত ৬০ বছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড করে। বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস জুন, ২০২২-এর প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে, চলমান সংকট অব্যাহত থাকলে তা গত শতাব্দীর ৭০ দশকের মতো অর্থনৈতিক স্থবিরতা (স্ট্যাগফ্লেশন) হতে পারে। উল্লেখ্য, এটি এমন একটি অবস্থা যা উচ্চমূল্যস্ফীতির সঙ্গে নিম্ন প্রবৃদ্ধি এবং উচ্চ বেকারত্ব সম্পৃক্ত। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) জুলাই, ২০২২-এর ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক আপডেটে টানা তৃতীয়বারের মতো বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ কমানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অর্থনীতির নিকট ভবিষ্যৎ অন্ধকার ও অনিশ্চিত এবং শিগগিরই মন্দার দিকে ধাবিত হতে পারে। সব মিলিয়ে বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পূর্বাভাস এখনো সুখকর নয়।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একসময় অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে সবার চেয়ে এগিয়ে থাকলেও শ্রীলংকা তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। এর জন্য বৈশ্বিক পরিস্থিতি দায়ী না থাকলেও অনেকে বাংলাদেশকে শ্রীলংকার সঙ্গে তুলনার চেষ্টা করেছেন। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে আইএমএফের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা চাওয়ায় অনেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সংকটাপন্ন বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশের ঋণ চাওয়াকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। বাংলাদেশের চলমান এ আমদানীকৃত মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকটের কঠিন পরিস্থিতির উদ্ভব প্রায় পুরোটা বৈশ্বিকভাবে সৃষ্ট হলেও শ্রীলংকার সংকটের মূলে ছিল বৈশ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে অভ্যন্তরীণ জনবিচ্যুত রাজনীতি ও ভুল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের হিসাবে ২০২১ সালের শেষের দিকে শ্রীলংকার মোট সরকারি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় জিডিপির ১১৯ শতাংশে আর শুধু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের ২০২১ অর্থবছরে জিডিপির অনুপাতে মোট ঋণের পরিমাণ ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ আর বৈদেশিক ঋণের অংশ ১২ শতাংশ। ২০১০ সালে বিশ্বব্যাংকের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রে ঋণের নিরাপদ সীমা হচ্ছে জিডিপির ৭৭ শতাংশ এবং উদীয়মান অর্থনীতির ক্ষেত্রে তা ৬৪ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক ঋণ মূল্যায়ন প্রতিবেদনেও বৈদেশিক এবং মোট ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে একটি নিম্ন ঝুঁকির দেশ হিসেবে অবহিত করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের ডলার ব্যবস্থাপনার জন্য এবং অর্থনীতির উত্থানে আইএমএফের কাছে ঋণ চাওয়াকে অনেকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশে প্রবৃদ্ধি ও পুঁজি সঞ্চয়নের কথা বিবেচনায় রেখে।