ব্রিটিশ রাজনীতিতে ভারতীয়দের উত্থান
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য লড়াই চলছে লিজ ট্রাস ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাকের মধ্যে। অভিজাত শ্রেণির প্রতিনিধি ঋষির রাজনৈতিক পূর্বসূরিদের আমলে কেমন ছিল যুক্তরাজ্যে ভারতীয়দের অবস্থান? কেন তাদের ব্রিটিশ রাজনীতির মাঠে নামতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়? লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
পটভূমি
ভারতের রাজনীতি প্রায় দুইশো বছর যুক্তরাজ্যের রাজনীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত ছিল। বলাই বাহুল্য, এই রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ ছিল ব্রিটিশদের হাতে। একসময় প্রবল দাপটের সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। গত শতাব্দীতে এই সাম্রাজ্যের সূর্য অস্ত যায়। এরপর যুক্তরাজ্যের রাজনীতির ধরনে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। এর সবচেয়ে সাম্প্রতিক উদাহরণ ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ঋষি সুনাকের যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে থাকা। তিনি একসময় যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। চলতি মাসে চাপে পড়ে পদত্যাগে বাধ্য হন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তার উত্তরসূরি হতে হাড্ডাহাড্ডি লড়ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস ও ঋষি সুনাক।
২০১১ সালের এক আদমশুমারিতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে ১৪ লাখ ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিক বাস করে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ২.৫ শতাংশ। দেশ ছেড়ে ভারতীয়রা বিলেতে পাড়ি দেয় কয়েক শতাব্দী ধরে। তবে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায় ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে ভারতীয়দের স্বাধীনতা অর্জনের পর। সে সময় দুবার যুক্তরাজ্যে বড় ধরনের অভিবাসনের ঢেউ ওঠে। প্রথম ঢেউ দেখা যায় চল্লিশের দশকের শেষে ও পঞ্চাশের দশকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে চল্লিশের দশকে যুক্তরাজ্যে শ্রমিকের ঘাটতি দেখা যায়। ঘাটতি পূরণে ভারত থেকে তখন অনেক শ্রমিককে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এরপরের ঢেউ দেখা যায় ষাট ও সত্তরের দশকে। ওই সময় ভারতীয়দের উগান্ডা, কেনিয়া, তাঞ্জানিয়াসহ পূর্ব আফ্রিকার আরও কয়েকটি দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয় বা উৎসাহ দেওয়া হয়। ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি সুশীল প্যাটেল, সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও অ্যাটর্নি জেনারেল সুয়েলা ব্রেভারম্যানের পরিবারের সদস্যরা ওই দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ই যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেন। এ নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে ভারতীয়রা যুক্তরাজ্যে থাকা শুরু করলেও ব্রিটিশ ইন্ডিয়ানদের যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে প্রবেশ খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। এত দেরিতে যুক্তরাজ্যের রাজনীতির মাঠে নামার কারণ একদিকে ভারতীয়দের দেশটিতে সামাজিক মর্যাদার ঘাটতি, অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রচার-কর্মকাণ্ড চালানোর মতো পর্যাপ্ত অর্থের অভাব।