বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের পেট্রোলিয়াম ও খনিজসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. ম. তামিম বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির কেমিক্যাল ও ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পালন করেন। বুয়েট থেকে স্নাতক শেষ করার পর যন্ত্রপ্রকৌশলে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন ভারতের আইআইটি-মাদ্রাজ থেকে; পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি করেছেন কানাডার আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সোসাইটি অব পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তিনি।
ম. তামিম: বাংলাদেশ একসময় জ্বালানিতে স্বনির্ভর ছিল এবং তা ছিল একটা মাত্র জ্বালানি- গ্যাস। এই একক জ্বালানিনির্ভরতার বিপদ সম্পর্কে ১৯৯৬ সালের জ্বালানি নীতিতে স্পষ্ট করে বলা আছে। সেখানে উত্তরবঙ্গের কয়লা খনি উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। তবে ওই সময়টাতে যেহেতু একটার পর একটা গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া যাচ্ছিল; কয়লার বিষয়টা আড়ালে চলে গিয়েছিল। এশিয়া এনার্জি যখন ফুলবাড়ীর কয়লা খনি বিষয়ে একটা প্রস্তাব দেয়, তখনই সবার টনক নড়ে। আমার কথা হলো, ১৯৯৬ সালের পর ২৬ বছরেও জাতীয় জ্বালানিনীতি যুগোপযোগী করা হয়নি। ২০০৪ সালে একটা চেষ্টা হয়েছিল, তবে তা অনুমোদিত হয়নি। এ জ্বালানিনীতিতে দেশের জ্বালানি চাহিদার পাশাপাশি কোথা থেকে তা আসবে এর উল্লেখ থাকার কথা। এর ভিত্তিতেই গ্যাস বা কয়লা অনুসন্ধানের কাজ হওয়ার কথা। আমি মনে করি, এশিয়া এনার্জির প্রস্তাবটা যাচাই করার দরকার ছিল; তারপর সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। কিন্তু সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে বলা হলো, কয়লাই অনুসন্ধান করা হবে না।
আমরা যদি ২০১০ বা তারও আগে ২০০৮ সালকে ভিত্তি বছর ধরি, তাহলে দেখা যাবে, এ সময়টাতে পেট্রোবাংলা আমাদের রিজার্ভ ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এখান থেকে কীভাবে সর্বোচ্চ উৎপাদনকে ধরে রাখা যায় এবং এ জন্য করণীয় কী সেগুলোর জন্য যে স্টাডি করা দরকার ছিল, তা করেনি। হ্যাঁ, তারা কিছু কূপ খনন করেছে। এতে উৎপাদন ৫০০ মিলিয়নের মতো বাড়িয়ে ২০১৬ সাল নাগাদ সর্বোচ্চ উৎপাদন ২৭৫০ মিলিয়নে পৌঁছেছে। এ সর্বোচ্চ উৎপাদনে আসার পর আলাদাভাবে বা সব ক'টি ক্ষেত্র মিলে হোক, পৃথিবীর সব দেশে অনেক বছর পর্যন্ত তা ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়। পেট্রোবাংলা ২০১৬ সালের সর্বোচ্চ উৎপাদনকে আরও অন্তত ৫-৭ বছর ধরে রাখতে পারত। তা না করে তারা সমাধান হিসেবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজির কথা বলল।
আমি মনে করি, পুরোনো গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে যেমন আরও গ্যাস পাওয়া সম্ভব, তেমনি স্থলভাগ ও সমুদ্রে আরও নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কার সম্ভব। কিন্তু এ লক্ষ্যে কোনো কার্যক্রম চালানো হয়নি। গত ২০ বছরে মাত্র ২৮টি নতুন কূপ খনন করেছে পেট্রোবাংলা, এর কতগুলো আবার পুরোনো গ্যাসক্ষেত্রেই করা হয়েছে। অর্থাৎ সেগুলোতে কোনো ঝুঁকি ছিল না।