জাত শিল্পী
তারেক মাসুদ গ্রাম থেকে এসে তখন ঢাকার একটি কলেজে ভর্তি হয়েছেন। থাকেন চাচাতো ভাই ও ভাবির ক্যান্টনমেন্টের বাড়িতে। সেখানেই তিনি ভাবির কাছে আলমগীর কবিরের গল্প শুনতেন। ভাবির ভাই ছিলেন আলমগীর কবির।
১৯৭৩ সালে প্রথম আলমগীর কবিরের বাড়িতে যাওয়ার পর যে অভিজ্ঞতাটি হয় তারেকের, সেটি ঐতিহাসিক। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তারেক মাসুদ, হঠাৎ একটি রুম থেকে বেরিয়ে এলেন আলমগীর কবির। রাশভারী কণ্ঠে বললেন, ‘এই শোনো, তুমি এই দিকে এসো।’
বলে একটি ঘরে নিয়ে গেলেন। তারেক মাসুদ তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। ঘরটি অন্ধকার, এমনকি জানালাও কালো কাপড়ে ঢাকা। সেখানে একটি প্রজেক্টর অন করলেন আলমগীর কবির। ‘পথের পাঁচালী’ সিনেমার ১৬ মিলিমিটার প্রিন্ট সংগ্রহ করে সেটাই স্টাডির অংশ হিসেবে আলমগীর কবির দেখছেন এবং দেখাচ্ছেন তরুণ বয়সের এক ছেলেকে!
একসময় তারেকের সখ্য হয়ে গেল এই নিপাট ভদ্রলোকের সঙ্গে। তারেক মাসুদ যখন ‘আদম সুরত’ ছবিটি করলেন, তখন ইংরেজি ধারাভাষ্যের জন্য কাউকে খুঁজছিলেন। ‘স্টপ জেনোসাইড’-এ আলমগীর কবির যে ধারাভাষ্য পাঠ করেছিলেন, সেটি খুবই পছন্দ ছিল তারেকের। আলমগীর কবিরকে ভয় ও দ্বিধার সঙ্গে প্রস্তাবটি দিলে খুবই আগ্রহের সঙ্গে রাজি হয়ে গেলেন তিনি। ১৯৮৮ সালের ভয়ংকর বন্যা তখন ঢাকায়। ধানমন্ডিতে প্রশিকার একটি স্টুডিওতে রেকর্ডিং হবে। কিন্তু ঢাকা শহর পানিতে সয়লাব। তারেক ফোন করে বললেন, ‘আজ রেকর্ডিং ছিল কিন্তু এ অবস্থায় তো সম্ভব না, আমি ক্যানসেল করে দিচ্ছি।’
আলমগীর কবির বললেন, ‘আজ পেছালে তুমি আরও ঢিলেমি করার সুযোগ পাবে। সেই সুযোগ আমি তোমাকে দেব না।’