পিছিয়ে যাওয়ার দৌড় প্রতিযোগিতায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভেবেছিল, পদ্মা সেতু নির্মাণ করলেই দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে তীব্র গতিতে ছুটতে থাকবে। তাদের জনপ্রিয়তা হিমালয়ের উচ্চতা অতিক্রম করবে। কেউ তাদের নাগাল পাবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নাটকীয় ভঙ্গিতে দেশবাসীকে জানিয়েও দিয়েছেন ‘পদ্মা সেতু হয়েই গেল।’
পদ্মা সেতু হওয়া অবশ্যই বাংলাদেশের বড় অর্জন। দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষ সরাসরি এর সুফল পাবে। আর দেশের অর্থনীতিও হবে গতিশীল। এ বিষয়ে কারও সন্দেহ নেই। কিন্তু পদ্মা সেতুই চালু করাই যে একটি সরকারের একমাত্র কাজ নয়, সে কথা আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-নেতাদের কে বোঝাবে? এবারের ঈদে যত মানুষ পদ্মা সেতুর সুবিধা পেয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ অন্যান্য রুটে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে। যে দেশে ৩ ঘণ্টার পথ পার হতে ১৩ ঘণ্টা লাগে, সে দেশে কোনো সরকার আছে বলে মনে হয় না।
উত্তরাঞ্চলের পথে পথে লাখ লাখ নারী, পুরুষ ও শিশু যে অবর্ণনীয় যন্ত্রণা ভোগ করল, তা পুরোপুরি দূর করতে না পারলেও কমিয়ে আনতে পারত সরকার। কিন্তু সড়ক বিভাগের হামবড়াভাব কর্মকর্তারা মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেই দায়িত্ব শেষ করেছেন। মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানো বড় সমস্যা বটে। কিন্তু একমাত্র সমস্যা নয়। ঈদের সময় কোন রুটে কতগুলো গাড়ি (গণপরিবহন ও প্রাইভেট কার) চলাচল করবে, সে সম্পর্কে কর্তাব্যক্তিদের কোনো ধারণাই নেই। ধারণা থাকলে নিয়ন্ত্রণ করার একটা চেষ্টা তাঁরা করতেন। ফ্রি–স্টাইলে সব ছেড়ে দেওয়ায় যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে। লাখ লাখ মানুষের আনন্দের ঈদযাত্রা বিষাদে পরিণত হয়েছে।
বিরোধী দল প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন ডাকলেও পুলিশের কয়েক শ সদস্য সেখানে হাজির থাকে ‘জনস্বার্থ ও জনশৃঙ্খলা’ রক্ষা করতে। কিন্তু ঈদের মহাসড়কে তাঁদের কাউকে দেখা যায়নি। সড়কের এই দুরবস্থা দেখে এক বন্ধু মন্তব্য করেছিলেন, সরকার যদি আগে থেকে বলে দিত, মহাসড়কে প্রথমে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের গাড়ি যাবে, এরপর পরিস্থিতি ভালো থাকলে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও আমজনতা যেতে পারবে। সে ক্ষেত্রে অবস্থা এতটা শোচনীয় হতো না। সড়ক, ট্রেন লঞ্চ—সর্বত্র বিশৃঙ্খলা। কেউ আইন মানেন না। মানানোর চেষ্টাও নেই। তাহলে জনগণের করের টাকায় সরকার নামের হাতি পোষা কেন?