মোটরসাইকেলচালকদের কথাও ভাবুন, বিকল্পটিও দেখান
এক.
দেশে গত জুন মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় যত মৃত্যু হয়েছে, তার ৪০ শতাংশ মোটরসাইকেলচালক অথবা আরোহী। একটি সংস্থা সংবাদপত্রের তথ্য সংকলন করে আমাদের এ তথ্য জানিয়েছে। আমরা যেটা জানতে পারিনি সেটি হলো, যানবাহনের সংখ্যার অনুপাতে মৃত্যুর হার কত এবং এই মৃত্যুতে প্রতিটি ক্ষেত্রেই কি মোটরসাইকেলচালক দায়ী?
একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর পর সেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই তরুণের মৃত্যু হয়। যেহেতু দুর্ঘটনাটি মোটরসাইকেলের, তাই আমরা হয়তো ধরেই নিয়েছি দোষ মোটরসাইকেলচালকের। কিন্তু ঘটনার পর একটি ভিডিও চিত্র বের হয়। সেখানে স্পষ্টই দেখা যায়, সেতুর ওপরে একটি মাইক্রোবাস থামানো ছিল। তার পাশে সেতুর ওপরের রাস্তায় শুয়ে কয়েক ব্যক্তি ছবি তুলেছিলেন। মোটরসাইকেলের চালক মূলত তাঁদের বাঁচাতে গিয়েই প্রাণ দিয়েছেন।
প্রশ্ন হলো, পদ্মা সেতুর মতো স্থাপনায় সন্ধ্যার পর সড়কের ওপর শুয়ে কারও ছবি তোলার কথা কি না। সেতুর পাশে দাঁড়িয়ে মানুষ ছবি তুলতে পারে, এ বিষয়ে যানবাহনের চালকদের সতর্ক থাকা দরকার। কিন্তু সড়কের মধ্যে আবছা আলোয় শুয়ে কেউ ছবি তুলবেন, সেটা মনে হয় কোনো চালকই মাথায় রাখবেন না।
দুই.
সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা। দিন দিন সমস্যাটি বাড়ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সমস্যাটি সমাধানে যেসব উদ্যোগ নেওয়া দরকার, সেসব ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে না পারার পর সবকিছুর জন্য মোটরসাইকেলকে দায়ী করার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, সড়কে ৪০ শতাংশ মৃত্যু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। পরিসংখ্যানটি ভুল, সেটা আমি বলছি না। কিন্তু এ ধরনের পরিসংখ্যান তুলে ধরা একপেশে দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ।
বাংলাদেশে নিবন্ধিত যানবাহনের ৭০ শতাংশ মোটরসাইকেল, বিপরীতে মৃত্যুর ৪০ শতাংশ মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুহার বেশি হওয়ার কারণ, যানবাহনটি ‘ভালনারেবল’। বড় যানবাহনের সঙ্গে ছোট যানবাহনের সংঘর্ষ হলে ছোট যানবাহনের চালক ও আরোহীর মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে। কিন্তু সব সময় এটা বলা যাবে না যে দোষ ছোট যানবাহনের চালকদের।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সড়ক দুর্ঘটনা
- মোটরসাইকেল চালক