উপমহাদেশের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ
বাঙালিরা কি পরশ্রীকাতর?
আমরা কি প্রশংসা করতে সব সময়ই একটু কাতর হই? এ নিয়ে কোনো গবেষণা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে সৈয়দ মুজতবা আলীর নানা গল্পের কথা তো বেশ মনে পড়েই যায়।
বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নিয়ে কথা বলছিলাম। পদ্মা সেতু সত্যি সত্যিই বাস্তবায়িত হলো। ঢাকায় গিয়ে স্বচক্ষে দেখেও এলাম। তবু এই সেতু নির্মাণের আগে এবং পরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কটাক্ষ, সমালোচনা, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ দেশে-বিদেশে কম দেখি না। একটা প্রচার তো প্রথম থেকেই হচ্ছিল যে এই পদ্মা সেতু নাকি চীনারাই বানিয়ে দিয়েছে। চীনা বাস্তুকার বা কন্ট্রাক্টরদের সাহায্য তো নেওয়া যেতেই পারে। আবার যদি ভারতের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পদ্মা সেতু বানানো হয়, তাহলেও কিন্তু পদ্মা সেতুটা ভারত বানিয়ে দিয়েছে—এ কথা বলা যায় না। ভারতের গুজরাটে যে বিশাল সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেলের মূর্তি নির্মাণ করা হয়েছে, তার জন্য ব্যবহৃত লোহা এসেছে চীন থেকে। তাহলে কি সরদার প্যাটেলের মূর্তিটা চীন বানিয়ে দিয়েছে বলা যায়?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে দেখেছি, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ঘটনার পর নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন রাস্তায় যখন বিরাট বিরাট মার্কিন জাতীয় পতাকা একেবারে সুউচ্চ অট্টালিকার ছাদ থেকে নিচ পর্যন্ত ঝোলানো, সেই সিল্কের পর্দাগুলোর জোগান হয়েছিল চীন থেকে। কেননা তখন এমন প্রয়োজন হয়েছিল জাতীয়তাবোধের তোড়ে যে সেই সিল্ক উৎপাদনের ক্ষমতা তো ছিলই না, উল্টো আমেরিকার মতো দেশ সস্তায় চীনা শ্রমিকদের দিয়ে তাদের নিজের জাতীয় পতাকা তৈরি করেছিল। এ ব্যাপারে বিবিসি একটা অসাধারণ ফিচার স্টোরি করেছিল।
যা হোক, ‘ধান ভানতে শিবের গীত’ গাইব না। শুধু এইটুকু বলতে পারি, ক্রমেই সমগ্র পৃথিবীর কাছে এটা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে যে একটা পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরো একবার গোটা দুনিয়ার কাছ থেকে মস্ত বড় সম্মান আদায় করে নিল। আর যাই হোক, কাজটা কিন্তু খুব সহজ ছিল না।
- ট্যাগ:
- মতামত
- পদ্মা সেতু
- পদ্মা সেতু প্রকল্প