মাদকের কাছে কি হেরে যাবে আমাদের তারুণ্য?

ঢাকা পোষ্ট শাহানা হুদা রঞ্জনা প্রকাশিত: ০৩ জুলাই ২০২৫, ১২:১৩

একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা একদিন দুঃখ করে বললেন, ‘আমি আমার সবকিছু দিয়ে দিতে পারি যদি কেউ আমার ছেলেকে মাদকের হাত থেকে ফিরিয়ে এনে দিতে পারেন। ছেলেটি রিহ্যাব থেকে মোটামুটি সুস্থ হয়ে ফিরে আসছে, কিন্তু কয়েকমাস পর আবার আগের মতো আচরণ করছে। অকারণে রাগারাগি, গালাগালি, ভাঙচুর করে। কাউকে সহ্য করতে পারে না। আমার সন্তান কবে, কীভাবে এই নেশার জগতে ঢুকে গেছে, আমরা বুঝতেই পারিনি। আমাদের সব অর্জনই আজ ব্যর্থ।’


কোন পরিস্থিতিতে পড়ে একজন বাবা নিজেকে ব্যর্থ মনে করছেন, তা কল্পনা করাও কঠিন। ঠিক এভাবেই মাদক আমাদের সন্তানদের ছিনিয়ে নিচ্ছে।


সেদিন পান্থকুঞ্জ-এর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম চার-পাঁচজন কিশোর বসে পলিথিনের ব্যাগে ফুঁ দিচ্ছে। বুঝলাম ওরা ড্যান্ডি আঠা গ্রহণ করছে। এর আগেও এদের মতো পথশিশুদের দেখেছি প্রকাশ্যে নেশাজাতীয় দ্রব্য ড্যান্ডি গ্রহণ করতে। সারাদিনের সংগৃহীত ভাঙারি বিক্রি করে যে আয় হয়, তা দিয়ে একবেলা খাবার কিনে খায়, আর বাকি দুইবেলা নেশা করে তারা।


একইভাবে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর এবং উত্তরাতে দেখেছি সন্ধ্যা নামার আগে জায়গায় জায়গায় বিভিন্ন ছোট ছোট জটলা করে ছেলেমেয়েরা গাঁজা টানছে। হয়তো অন্য তল্লাটেও এমনটা চলছে, আমি লক্ষ্য করিনি। এরা বয়সে তরুণ।


একদিন রাতে পাড়ায় দারুণ হল্লা হতে শুনলাম। রাগারাগি, গালাগালি, ভাঙচুরের শব্দ। পরে জানলাম পাড়ার মাদকসেবীদের মধ্যে কোন্দল। এরা সবাই বয়সে তরুণ, ছোট থেকে দেখছি। কিন্তু কবে যে ওরা এই জগতে ঢুকে গেছে জানতেও পারিনি।



প্রথম আলো রিপোর্ট করেছে দেশে এখন মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা ৮৩ লাখ। মাদকাসক্তদের বেশিরভাগ পুরুষ। নারী ও শিশুদের মধ্যেও মাদকাসক্তি রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) এক সমীক্ষায় মাদকাসক্ত জনসংখ্যার এই হিসাব প্রকাশিত হয়েছে।


তবে আমার ধারণা, এই সংখ্যা আরও বেশি। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লা, বস্তি, পার্ক এলাকায় এখন মাদকসেবীদের ভিড়। অসংখ্য পরিবার বিপর্যস্ত মাদকের কবলে পড়ে।


প্রতিদিন পত্রিকায় রিপোর্ট থাকে কীভাবে মাদকসেবী সন্তান বাবা-মাকে নিগ্রহ ও নির্যাতন করে, আটকে রেখে টাকা ছিনিয়ে নেয়, নিজের ঘরেই চুরি করে, ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় শুধুমাত্র মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে। এছাড়া চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই এমনকি মানুষ হত্যা করতেও দুবার ভাবে না।


মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক বলছেন, মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা যদি ৮৩ লাখে পৌঁছে যায়, তবে সেটি দেশের মাদক পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি নির্দেশ করে। এটা প্রমাণ করে, দেশে মাদক একেবারেই নিয়ন্ত্রণে নেই। তিনি মনে করেন, মাদক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৫২ শতাংশ গাঁজা ব্যবহার করে। এরপরেই প্রায় ২০ শতাংশ ইয়াবা গ্রহণ করে।


জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে মাদকের কারণে প্রতিবছর পাচার হয়ে যায় ৪৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার (৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা)। আর মাদক কেনাবেচা করে অর্থ পাচারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম।


আমাদের দেশে যত ধরনের সমস্যা রয়েছে, এরমধ্যে অন্যতম ভয়াবহ সমস্যা হচ্ছে মাদক। দিন দিন মাদকের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। নিষিদ্ধ জগতে অস্ত্রের পর মাদকই সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা। শহর-গ্রাম সবখানেই মাদক সহজলভ্য। এর ক্রেতা শিশু থেকে বয়স্ক সবাই। শিশু, কিশোর ও তরুণরা এ জাতির ভবিষ্যৎ। অথচ এই জনগোষ্ঠীর বড় অংশ এখন মাদকের কবলে। এদের ফেরাতে না পারলে শুধু পরিবার নয়, দেশটাই ধ্বংস হয়ে যাবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও