দিনের শান্তি রাতেও চাই
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৫ জুন। ১৬ জুন ‘আজকের পত্রিকা’র প্রধান শিরোনাম ‘দিনের শান্তি রাতে নষ্ট’। আমার কাছে কুসিক নির্বাচনের পর এ শিরোনামটি সবচেয়ে জুতসই মনে হয়েছে। কারণ, সারা দিন ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে। কয়েকটি কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনের কারণে ভোট গ্রহণ কিছুটা শ্লথ হওয়া এবং শুরুর দিকে ভোটার উপস্থিতি কম থাকা ছাড়া ভোট নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। কাউকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে কিংবা কোনো ভোটারকে ইভিএম মেশিনের সামনে দাঁড় করিয়ে কোনো ‘ডাকাত’ বা ‘সন্ত্রাসী’ বলেছে ‘আঙুল আপনার টিপ আমার’—এমন অভিযোগও শোনা যায়নি। ভোটাররা ভীতিমুক্তভাবে নিজের পছন্দের প্রার্থীর মার্কায় টিপ দিতে পেরেছেন। কোনো কেন্দ্র থেকে কোনো প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেনি। আমাদের দেশে সাম্প্রতিক সময়ে ভোট নিয়ে যেসব অভিযোগ শোনা যায়, তার একটিও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সারা দিন শোনা যায়নি। ভোট গ্রহণের দায়িত্ব যাঁরা পালন করেছেন, তাঁরা যথেষ্ট দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। এটা ভালো লক্ষণ অবশ্যই। শুধু স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে চিঠি দিয়েও কুমিল্লা ত্যাগে বাধ্য করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। একে অনেকেই কমিশনের অসহায় ‘আত্মসমর্পণ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
ভোটের ফলাফল ঘোষণার শুরুও ভালো ছিল। আমি নিজে টেলিভিশনে দেখেছি, শুরুর দিকে কয়েকটি কেন্দ্রের ঘোষিত ফলে সামান্য এগিয়ে ছিলেন টেবিলঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। তারপর বেশ কিছু সময় এগিয়ে ছিলেন নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। ভোটের ব্যবধান অবশ্য কখনোই হাজার হাজার ছিল না। মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০১টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা পর্যন্ত সাক্কু সামান্য ভোটে এগিয়ে ছিলেন। এ সময় ফল ঘোষণার জায়গায় নৌকা ও টেবিলঘড়ি প্রতীকের দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বচসা ও কথা-কাটাকাটি শুরু হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, শান্তি বিঘ্নিত হয়। ফলাফল ঘোষণা ৪৫ মিনিটের জন্য স্থগিত থাকে। আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ-আনসার সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।