শিক্ষার নিষ্প্রদীপ চাবি এবং ‘স্ট্রিটলাইট ইফেক্ট’
পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশে এখন পর্যন্ত যে শিক্ষাব্যবস্থাটি প্রদীপ্ত, তা মূলত প্রায় তিন শ বছরের পুরোনো। শুধু এত পুরোনো বলে নয়, আরও নানা কারণে এ ব্যবস্থা আর এ যুগে প্রাসঙ্গিক নয়। যখন এটা চালু হয়, তখন শিল্পবিপ্লব চলছিল বলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আদলেই তৈরি হয়। একই ব্যাচের কাঁচামালগুলোকে যেমন একই রকম হতে হয়, ঠিক সেভাবে বয়স অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ক্লাসে ভাগ করে দেওয়া হয়। কাঁচামালগুলো যেমন একই প্রক্রিয়ায় একরৈখিকভাবে বিভিন্ন পর্যায় পার হওয়ার পর শেষ পরীক্ষায় উপযুক্ত পণ্য হিসেবে বিবেচিত হলে বাজারে বিক্রি হওয়ার জন্য বিবেচিত হয়, শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটে। এই একরৈখিকতা আমাদের মস্তিষ্কের এতই গভীরে প্রোথিত যে আমরা ধরেই নিই, একজন ছয় বছরের শিক্ষার্থীর জ্ঞান একজন বারো বছরের শিক্ষার্থীর অর্ধেকের বেশি হবে না।
আরেকটি সমস্যা আছে। জেমস হেমিংয়ের ভাষায়, সেটা ‘একাডেমিক বিভ্রম’। পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্লেটোর ‘একাডেমির’ ধারণার সঙ্গে শিক্ষাকে গুলিয়ে ফেলা। এ কারণেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের প্রায় সব আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক দিকটাকে মাথায় রেখে করা হয়। এই ‘একাডেমিক বিভ্রমের’ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কেবল শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্ক নিয়ে, তা–ও পুরো মস্তিষ্ক নয়, শুধু মস্তিষ্কের বাঁ দিকটা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অর্থাৎ মস্তিষ্কের যে অংশটা যুক্তি, বুদ্ধি, তথ্য বিশ্লেষণ ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে, সেটাই গুরুত্ব পায় আর মস্তিষ্কের ডান দিকটা যেখানে সৃষ্টিশীলতা, সহজাত অন্তর্দৃষ্টি বা আবেগের মতো বিষয়গুলোর বসবাস, তাকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এ ধরনের শিক্ষাদান অনেকটা এক পায়ে দৌড়াতে শেখানোর মতো।