৫১ বছরের পরিত্যক্ত জমি তেঁতুলতলা মাঠ
রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত স্কয়ার হাসপাতালের উল্টো দিকে গলিপথে ঢুকলেই আবাসিক এলাকা উত্তর ধানমণ্ডি ও কলাবাগান লেক সার্কাস। পথচারী, দোকানি ও এলাকাবাসীর কাছে জানতে চাইলেই সবাই হাতের ইশারায় সামনে দেখিয়ে দিল তেঁতুলতলা মাঠ। সবার পরিচিত জায়গাটি লেক সার্কাস উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে রাস্তার মোড়ে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের বর্ণনা ও নথিপত্র থেকে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই জায়গাটি পরিত্যক্ত।
নাজমা আছিরন নামের এক বিহারি নারী ছিলেন এই ৩২ শতক জমির মালিক। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি দেশ ছেড়েছেন। সেখানে একটি তেঁতুলগাছ থাকায় জায়গাটি তেঁতুলতলা নাম পায়।
এই খোলা জায়গায় উত্তর ধানমণ্ডির বাসিন্দারা ঈদের নামাজ পড়ে। ঈদের জামাতের ইমামের জন্য একটি মিম্বারও করা আছে। আবার মহল্লার কেউ মারা গেলে গোসলের জন্য একটি পাকা ঘর তৈরি করা আছে ওই জমিতে। সেখানে জানাজাও হয় স্থানীয়দের। এর বাইরে প্রায় সারা দিনই শিশু-কিশোররা এই মাঠে খেলাধুলা করে। স্থানীয় কয়েক প্রজন্ম বড় হয়েছে এই মাঠে খেলাধুলা করে। নানা দিবসে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়। এভাবেই ব্যবহার হয়ে আসছে তেঁতুলতলা মাঠ।
সত্তরোর্ধ্ব জোবেদা বেগম উত্তর ধানমণ্ডির বাসিন্দা। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘১৯৭০ সাল থেকে আমি এই এলাকায় থাকি। বিহারি এক নারীর জমি ছিল এটি। ’
এলাকাবাসীর পক্ষে আন্দোলন করা এস এম শহিদুল্লাহ সুজা ও মাহবুবুল আলম নথিপত্র দেখিয়ে জানান, নাজমা আছিরন নামের এক নারী এই ৩২ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন। আরএস এবং এসএ খতিয়ান অনুযায়ী ওই জমি পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসাবে নথিভুক্ত হয়।
নথিপত্র থেকে জানা গেছে, ২০০৬ সালের পর তেজগাঁওয়ের আওলাদ হোসেন মার্কেটের মনু মিয়ার মেয়ে মমতাজ বেগম ও বেগম জাহান ওই জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করেন। বিলকিস বানু নামের ধানমণ্ডির আরেক নারীও জমিটি বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেন। পরে তিনি হাইকোর্টে রিটও করেন।
বিলকিস বানুর স্বামী একজন আইনজীবী। কাজী ওবায়দুর রহমান। তাঁরাও উত্তর ধানমণ্ডির বাসিন্দা। বিলকিস বানু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটি সরকারি গ্যাজেটভুক্ত পরিত্যক্ত সম্পত্তি। আমি ভূমিহীন হিসেবে বরাদ্দের জন্য আবেদন করি। বরাদ্দ পেতে আইনগত পদক্ষেপ নিয়ে অনেক দূর এগিয়েছি। ’ তিনিও পুলিশের বাধার মুখে পড়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘আমি পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। স্থানীয় কয়েকজনের বিরুদ্ধেও মামলা করেছি। আমি সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২০১৫ সালে সেখানে একটি ছাপরাও তুলেছিলাম। কিন্তু একটি পক্ষ আমার ঘর ভেঙে দেয়। তখন আমি ভূমি মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে রিট আবেদন করি। ’ তিনি দাবি করেন, ২০১৮ সালে ঘর ভাঙার ঘটনাটি পিবিআই তদন্ত করে এবং তাঁর পক্ষে প্রতিবেদন দেয়। ২০১৯ সালে হাইকোর্ট তাঁর পক্ষে রুল জারি করেন। পরে পুলিশ মামলা তুলে নিতে তাঁকে চাপ দেয়।