গ্রামবাংলার পরিবহন আধুনিকায়ন প্রসঙ্গে

বণিক বার্তা এম আর খায়রুল উমাম প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০২২, ১০:০৬

স্কুলে পড়াকালীন এক শিক্ষক বলেছিলেন, বিশেষজ্ঞ হচ্ছেন যিনি বিশেষভাবে অজ্ঞ। শুনে অবাক হয়েছিলাম। এ তো সবাই যা বলে, ঠিক তার উল্টো কথা। কিন্তু কেন তিনি এমন কথা বলেছিলেন তা জানার কৌতূহল থাকলেও সাহস পাইনি প্রশ্ন করার। তবে তিনি আমাদের মুখ দেখে মনের কথা ঠিকই বুঝেছিলেন। তিনি বলেছিলেন বিশ্বকে জানলে, দেশকে বুঝলে তখন তোমরা আমার কথার সত্যতা দেখতে পাবে। আজ সেই নমস্য শিক্ষককে শতকোটি প্রণাম জানাই। এখন দেশ ও জাতির দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের বচনামৃত শুনে, তাদের কর্মকাণ্ড দেখে শিক্ষকের কথার মর্মার্থ কিছুটা বুঝতে চেষ্টা করছি। দেশের দায়িত্বপ্রাপ্তরা সময়ের সিদ্ধান্ত সময়ে নিতে না পারায় চারদিকে ব্যর্থতার পাহাড় গড়ে উঠেছে। অথচ তারা কিন্তু অন্যের কাঁধে বন্দুক রেখে নিজেদের সব ব্যর্থতার দায়ভার অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে স্বস্তিতে আছেন, আনন্দে দিন কাটাচ্ছেন। প্রতিদিন রাজধানীর ঠাণ্ডা ঘরে বসে প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে, প্রতিদিন একনেকে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ দেখছে এসব কর্মকাণ্ডে প্রতিদিন জাতীয় স্বার্থ কীভাবে একপেশে হয়ে পড়ছে। আর দায়িত্বপ্রাপ্তরা একেই উন্নয়নের জোয়ার বিবেচনায় আত্মতুষ্টি লাভ করছেন। দেশ উন্নয়নশীল থেকে মধ্যম আয়ের এবং মধ্যম আয় থেকে উন্নত দেশের কাতারে নাম লেখানোর প্রতিযোগিতায় সাফল্য লাভ করছে। অথচ এত উন্নয়ন আর অগ্রগতির মধ্যে অনেকে সাধারণ মানুষকে দেখতেই পারছে না। আবার সাধারণ মানুষ স্ব-উদ্যোগে নিজেকে রক্ষা করার কর্মকাণ্ডে প্রতি পদে পদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।


৩০ বছরের বেশি সময় ধরে গ্রামবাংলার পরিবহন হিসেবে নসিমন-করিমন-আলমসাধু বাংলাদেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আর গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রেখে চলেছে। সারা দেশে লাখ লাখ নসিমন-করিমন মানুষের বেকারত্ব দূর করেছে, পরিবারের অন্নের সংস্থান করেছে, সাধারণ মানুষকে সততার সঙ্গে জীবনসংগ্রামে ব্রতী করেছে। তবে একথা স্বীকার করতে লজ্জা পাওয়ার কোনো কারণ নেই যে বর্তমান সময়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতি বিবেচনায় গ্রামবাংলার এ পরিবহনগুলো অনেক অনেক পিছিয়ে। কিন্তু শুধু এ বিবেচনায় পরিবহনগুলোকে বন্ধ করে দিতে হবে! সড়কে চলতে দেখা যাবে না! সেটা তো কাম্য হতে পারে না। অথচ আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এমন কর্মকাণ্ডই করে চলছেন বছরের পর বছর। নসিমন-করিমনের অবদান বিবেচনা করলেন না, প্রস্তুতকারকদের দিকে তাকালেন না, শুধু নিজেদের বিবেচনাকে প্রাধান্য দিয়ে, একের পর এক নির্দেশ দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে রাস্তায় নামিয়ে দিলেন। এ পরিবহনচালকরা নিজেদের ও পরিবারকে রক্ষা করতে বারবার আন্দোলন-সংগ্রামে বাধ্য হলেন, আর সেখানেও কোটি কোটি টাকার খেলা হলো। এ সবকিছুর মধ্যে পরিবহনটিকে বিজ্ঞানসম্মত করতে কেউ এগিয়ে এলেন না। বরং আইনের আশ্রয় নিয়ে পরিবহনগুলো বন্ধের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ পাকাপোক্ত করল ক্ষমতার কেন্দ্র। আর সব বাধা মাথায় নিয়ে এগিয়ে চলতে লাগল গ্রামবাংলার পরিবহন, গ্রামবাংলার অর্থনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করে।


নসিমন-করিমন-আলমসাধুর অনেক যান্ত্রিক ত্রুটির কথা সাধারণ মানুষ জানে। একুশ শতকে এমন পরিবহন কল্পনা করাও কঠিন। তার পরও সাধারণ মানুষ এ পরিবহন থেকে যে পরিমাণ সেবা পায় তা কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারে না। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে এ পরিবহন বন্ধ করতে যত উদ্যোগ গ্রহণ করছে, এর আসন ততই পাকাপোক্ত হচ্ছে। আজ পর্যন্ত কোনো জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে এমন কোনো সমীক্ষা প্রতিবেদন দেখেছি বলে মনে করতে পারিনি, যেখানে এ পরিবহনকে দেশের সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে সড়ক দুর্ঘটনার দায় কেন এদের ওপর চাপানো হচ্ছে! অনেকে বলেন, গ্রামবাংলার এ পরিবহন তৈরিতে দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কোনো ভূমিকা নেই। এখানে তেল-কালিমাখা শ্রমিকের ভূমিকাই মুখ্য। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর অনেকের পক্ষেই বিষয়টা সহ্য করা খুব কঠিন। তাই এ পরিবহনগুলোকে কিছু লোক মসৃণ চলাচলে বাধা হিসেবে দেখছে আবার পরিবহন ব্যবসায়ীরা দেখছেন তাদের ব্যবসার একটা অংশ নিয়ে চলে যাচ্ছে এগুলো। এ দুই দলের মধ্যকার স্বার্থের টানাপড়েনেই যত সমস্যা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও