দক্ষিণ এশিয়া নীতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের অবস্থান
ইউক্রেনের যুদ্ধ কবে থামবে তা আমরা এখনো জানি না। ছোট্ট একটা দেশ ইউক্রেন। সেই দেশকে আক্রমণ করেছেন রাশিয়ার দোর্দণ্ড প্রতাপশালী রাষ্ট্রনায়ক পুতিন। ইউক্রেনের মানুষ বাঁচার জন্য লড়াই করছে। সেখানে অনেক নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছে। আবার আমেরিকার যে ইউক্রেনের জন্য প্রাণ কাঁদছে, সেটা যতটা না ইউক্রেনের মানুষের জন্য, তার চেয়ে অনেক বেশি রাশিয়াকে ‘টাইট’ দেওয়ার জন্য।
ন্যাটোর সদস্যদের একটা পাল্টা যুদ্ধের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। আমেরিকা তো ধোয়া তুলসীপাতা নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধবাজ দেশ হিসেবে আমেরিকার পরিচিতি কিছু কম নয়। অতএব ইউক্রেনকে নিয়ে যুদ্ধটা মূলত আমেরিকা বনাম রাশিয়ার। আর সেই যুদ্ধের প্রভাব এসে পড়ছে এই উপমহাদেশে। ভারত এখন একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে অবস্থান করছে। তার কারণ, রাশিয়ার বিরোধিতা করে আমেরিকার পাশে দাঁড়ালে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যাবে। রাশিয়ার কাছ থেকে যে আমরা শুধু অস্ত্র কেনা হয় তা নয়, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক তাতে নিরাপত্তাজনিত কারণেও রাশিয়াকে দরকার হয়।
আফগানিস্তানে তালেবান সরকার গঠিত হওয়ার পরও ভারত বড় কোনো বিপদের মধ্যে পড়ল না, বরং উল্টো পাকিস্তানকেই কিছুটা কোণঠাসা করে দিতে পেরেছে। এ ছাড়া তালেবানের সঙ্গেও ভারত একটা এনগেজমেন্টে গেল; সেটাও রাশিয়ার সমর্থন নিয়েই করল। রাশিয়াকে একদম শত্রু করে দিলে যে বিপদ, সেটা হচ্ছে চীন আর রাশিয়ার বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব তো এখন খুব মাখো মাখো। এটাকে বলা হচ্ছে প্রিমোলার ফ্রেন্ডশিপ। চীন যদি রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে এবং ভারত যদি রাশিয়ার শত্রু হয়, তাহলে আমেরিকা তো অনেক দূরের দেশ আর চীন অনেক কাছের, সেখানে চীনের সঙ্গে শত্রুতা করা ভারতের জন্য খুব একটা সুখকর নয়।
এখন পরিস্থিতিটা এমন যে ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে যখন আমেরিকা ও রাশিয়ার একটা চূড়ান্ত লড়াই চলছে তখন পাকিস্তানও কিন্তু অশান্ত হয়ে উঠেছে। সেখানে একটা ভয়ংকর নৈরাজ্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গদি চলে গেছে। অবশ্য নানা রকমভাবে তিনি গদি রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী হচ্ছে মূল ক্ষমতার উৎস। আর সেই সেনাবাহিনী এখন ইমরান খানকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
এ রকম একটা পরিস্থিতিতে আমরা দেখছি, ভারতের আর এক প্রতিবেশী রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কাও খুব বিপদে পড়েছে। শ্রীলঙ্কা এখন চূড়ান্ত অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছে। সেখানে হাসপাতালে অপারেশন করা যাচ্ছে না। হাসপাতালগুলোর ওষুধ কেনার ক্ষমতা নেই। জিনিসপত্রের দাম এমন বেড়ে গেছে যে সেখানে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। ভারতে জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও আমরা তবু আলু, পেঁয়াজ পাচ্ছি, সবজি কিনে নিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারছি। চরম আর্থিক সংকটের কারণে শ্রীলঙ্কায় তো সবজি বাজারই উঠে গেছে। সেই কারণে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক নেতৃত্ব জরুরি অবস্থা জারি করে দিতে বাধ্য হয়েছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ইউক্রেন সংকট
- ইউক্রেন সংকট