তিনটি আজব ঘটনা

www.ajkerpatrika.com জাহীদ রেজা নূর প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২২, ১০:০০

প্রায় কাছাকাছি সময়ে যে তিনটি আজব ঘটনা ঘটে গেল, তা নিয়ে ভাবার অবকাশ আছে। তিনটি বিষয়েই হিন্দুসম্প্রদায়ের তিনজন মানুষ হয়েছেন আক্রমণের শিকার। ঘটনার ভেতরের ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর দেখা গেল, দুটো ঘটনা একেবারে স্থানীয় স্কুল-রাজনীতি, মোবাইল ফোন হাতে অকালপক্ব শিক্ষার্থীর দুর্বিনীত আচরণ এবং সমাজে ছড়িয়ে যাওয়া বিদ্বেষেরই সরল অনুবাদ। এটাকে আমার সম্প্রদায়গত আক্রমণ মনে হয়নি। কিন্তু ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে মানুষের মনে ভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে যে অসহিষ্ণুতার সৃষ্টি হয়েছে, তার আভাস পাওয়া যাবে। 


এক.
পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেকের কথা দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি রাজধানীর ফার্মগেটে সনাতনধর্মীয় নারী শিক্ষক লতা সমাদ্দারকে টিপ পরার কারণে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছেন। এটাই ঘটনা। পরবর্তীকালে তিনি নিজের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন বলে যে বয়ান দিয়েছেন, তা যে বানোয়াট, সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে সিসিটিভি। তাঁর কর্মকাণ্ড একটু তলিয়ে দেখা যাক–


১. ছিলেন মোটরসাইকেলে। মাথায় হেলমেট ছিল না। ছিল টুপি। পুলিশ সদস্য হয়ে তিনি হেলমেট না পরে আইন ভেঙেছেন। এভাবে টুপি পরে তিনি পুরো পথ পাড়ি দিয়েছেন, তাঁকে কোনো ট্রাফিক পুলিশ আটকায়নি, কোনো জরিমানা দিতে হয়নি তাঁকে। 


২. তিনি খুবই ধর্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছেন। যার জন্য স্মার্টফোন নেই তাঁর হাতে, তিনি টিভি দেখেন না। অথচ নারী বা অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি বিদ্বেষ পুষে রাখেন মনে। তিনি প্রকাশ্য রাস্তায় মোটরসাইকেলে বসে একজন নারীকে টিপ পরার ‘অপরাধে’ প্রকাশ্যে গালাগাল করতে পারেন।


দুই.
মুন্সিগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে নিয়ে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা সুপরিকল্পিত। তিনি এলাকার একজন নামী বিজ্ঞান শিক্ষক। তাঁর কাছে প্রাইভেট পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেক। ক্লাস টেনের যে শিক্ষার্থীটি মোবাইলে কথোপকথন রেকর্ড করেছে, তার অভিসন্ধি বোঝা কঠিন কিছু নয়। বিজ্ঞান ক্লাসে ধর্ম নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করেছে যে ছাত্ররা, তাদের ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষ কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করছি। এটা তো সাধারণ কোনো ঘটনা নয়। এটা অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ হঠাৎ করে ঘটানো যায় না। ক্লাসরুমে স্মার্টফোন নিয়ে যাওয়াও অন্যায়। এ ধরনের কাণ্ড ঘটাতে পূর্বপ্রস্তুতি লাগে। আর তাতে প্রমাণিত হয়, পরিকল্পিতভাবেই তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এদের মানসিক ধরন বিবেচনা করে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো উচিত কি না, তা নিয়ে ভাবা উচিত সংশ্লিষ্ট মহলের।


তিন.
নওগাঁয় হিজাব পরার কারণে প্রহার করা নিয়ে কতিপয় ছাত্রী যে মিথ্যে রটিয়েছিল, তাকে কাজে লাগিয়েছে এলাকারই কিছু মানুষ। স্কুল-রাজনীতির শিকার হতে হলো আমোদিনী পালকে। তাঁর ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেল, সে দায় কে নেবে? কোমলমতি ছাত্রীরা যে একের পর এক মিথ্যে বলে গেল, সে মিথ্যা বলার শিক্ষা তারা পেল কোথায়? হিজাব পরা নিয়ে বিতর্ক উসকে দিতে পারলে সেটা যে মুসলমান সম্প্রদায় লুফে নেবে, সে কথা তারা কাদের কাছ থেকে জানল? কিংবা কারা তাদের বিপথে চালিত করল? তাদের খুঁজে বের করা দরকার।


সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, স্কুলড্রেস না পরে আসায় স্কুলের ছেলেদের মৃদু আঘাত করেছেন শরীরচর্চা শিক্ষক বদিউল আলম, মেয়েদের মৃদু আঘাত করেছেন আমোদিনী পাল। পুরো ঘটনাটিকে এমনভাবে সাজানো হলো, যেন আমোদিনী পাল হিজাব না পরায় পিটিয়েছেন ছাত্রীদের। ছাত্রীরা বানিয়ে বানিয়ে তাঁর হিজাববিরোধী সংলাপেরও বয়ান দিল! দ্রুত সে খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাষ্ট্র করে দেওয়া হলো।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও