হারিয়ে যাওয়া নির্বাচনের খোঁজে
গত বুধবার নির্বাচন কমিশন ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে জাতীয় সংবাদপত্রের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে। এ সভায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সংবিধান ও ১৯৭২ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের অধীন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে দায়িত্ব তাঁদের ওপর অর্পিত হয়েছে, সেটি পালন করার চেষ্টা করবেন। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা চান।
সেদিনের আলোচনায় স্বাভাবিকভাবে গুরুত্ব পেয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, যা ২০২৩ সালের শেষে হওয়ার কথা। বিদায়ী কে এম নূরুল হুদা কমিশন নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ ও পক্ষপাতপুষ্ট। এ অবস্থায় নতুন কমিশনের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা। আর সেটি তখনই সম্ভব হবে, যখন তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনেকগুলো স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচন হবে। সেগুলো তাদের জন্য অ্যাসিড টেস্ট হতে পারে।
নির্বাচন কমিশন চাইলেই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে পারবে না; যদি রাজনৈতিক নেতৃত্ব, জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা না পায়। সে ক্ষেত্রে তাদের করণীয় কী? যত বাধা বা প্রতিকূলতা থাকুক না কেন, সংবিধান ও আইন কমিশনকে যে ক্ষমতা দিয়েছে, তা প্রয়োগ করতে হবে।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি। ঐকমত্যের অর্থ এই নয়, কোনো রাজনৈতিক দল নীতি ও আদর্শ বিসর্জন দিয়ে অন্যদের সঙ্গে সমঝোতা করবে। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ক্ষমতার বাইরে থাকতে জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় জীবনবাজি রেখে আন্দোলন করেন; ক্ষমতায় গিয়ে তাঁরা ভোটাধিকার হরণের নানা ফন্দিফিকির আঁটতে থাকেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্য যেসব আইন ও বিধি আছে, তার প্রায় সবটা অকার্যকর করে দিয়েছেন তাঁরা। ত্রুটিপূর্ণ ও ভুয়া ভোটার তালিকা বাতিল করে তাঁরা ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা করলেন, ব্যালট পেপার ছিনতাই থামাতে ইভিএম আনলেন, এখন ভোটকেন্দ্রে ভোটারেরই যাওয়ার প্রয়োজন হয় না! তফসিল জারি করে ভোট গ্রহণের দিন কাউকে বিজয়ী ও কাউকে পরাজিত ঘোষণা করলেই হলো। আগে ‘মাগুরা মডেল’ ছিল একটি নির্বাচনী এলাকায়, এখন সারা দেশে। হুদা কমিশন এমন নির্বাচনী ব্যবস্থা করেছে, যাতে শতভাগ ভোট পড়ে, এমনকি মৃত ব্যক্তির নামেও ভোট হয়ে যায়।