যেভাবে সরকারি টোল আদায় হয়, সেভাবেই সড়ক ও বাজারে গুপ্ত চাঁদাবাজি হচ্ছে। চাঁদাবাজি কমানো গেলে নিত্যপণ্যের দামও কমত। সরকারদলীয় নেতা-কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকে ইঙ্গিত করে দেশের ব্যবসায়ীরা এ অভিযোগ ও দাবি করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে চাঁদাবাজদের তালিকা চেয়েছেন। আর পুলিশের পক্ষ থেকে ঢালাও অভিযোগ না করে যারা চাঁদাবাজিতে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। সরকারের মন্ত্রী ও পুলিশের মুখপাত্রের ভাষ্য থেকে জনমনে ধন্দ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক যে চাঁদাবাজের তালিকা তৈরি করা আর চাঁদাবাজি বন্ধের দায়িত্ব আসলে কাদের।
পবিত্র রমজান মাসে দেশের পণ্য সরবরাহ ও বাজারের হালচাল নিয়ে গত ২ এপ্রিল দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধি সেখানে বলেন, ‘সরবরাহে কোনো ঘাটতি না থাকলেও খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ার অন্যতম কারণ চাঁদাবাজি। এতে প্রতিটি পণ্যের দামের একটি অংশ যায় চাঁদার পেছনে। এসব যদি সামাল দেওয়া না যায়, ভোক্তা পর্যায়ে নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না।’ প্রথম আলোর সংবাদে জানা যাচ্ছে, ক্যাব প্রতিনিধি যখন সড়কে ও বাজারে চাঁদাবাজির কথা বলছিলেন, তখন সভায় উপস্থিত অধিকাংশ ব্যবসায়ী হাততালি দিয়ে তাঁকে সমর্থন জানান। একই সঙ্গে গুপ্ত চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে বলে কেউ কেউ স্লোগান দেন।
দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন বেড়ে যাওয়ার পেছনে ব্যবসায়ীরা অবশ্য নির্দোষ নন। আজ রোদ উঠেছে, কাল বৃষ্টি নেমেছে, পরশু কুয়াশা পড়েছে—এ রকম যেকোনো অজুহাতে সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। আমদানিকারক থেকে শুরু করে পাড়ার মোড়ের খুচরা বাজার, সবখানেই এখন সিন্ডিকেটের চোখরাঙানি। আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের একটি পছন্দের অজুহাত—বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে, তাই দেশের বাজারে দাম বেড়েছে। কিন্তু বিশ্ববাজারে যে হারে দাম বাড়ছে, দেশের বাজারে দাম বাড়া তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমদানিনির্ভর সব পণ্যের নিয়ন্ত্রণ হাতে গোনা ব্যবসায়ীদের হাতে। আবার পাইকারি বাজারের নিয়ন্ত্রণও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কয়েকজনের হাতে। ফলে মজুত, কারসাজি, বাজারে অস্থিরতা চলতেই থাকে। অবশ্য সিন্ডিকেটের বাইরেও বিপুলসংখ্যক ব্যবসায়ী রয়েছেন। সরকারি টোলের মতো চাঁদাবাজিও যে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে, তাতে ভোক্তাদের মতো তাঁরাও ভুক্তভোগী।
আমদানিনির্ভর পণ্যের সঙ্গে সবজি, মাছ, মাংসসহ যেসব খাদ্যপণ্য দেশেই পর্যাপ্ত উৎপাদন করা হয়, সেসবও ভোক্তারা ন্যায্যমূল্যে কিনতে পারেন না। কৃষক বা উৎপাদকেরা যে দামে বিক্রি করেন, তার চেয়ে ক্ষেত্রবিশেষে কয়েক গুণ বেশি দামে কিনতে হয় ভোক্তাদের। ৪ এপ্রিল প্রথম আলোয়, ‘গ্রামের কৃষকের ২৫ টাকার বেগুন শহরে এসে ৮০’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বগুড়ার প্রসিদ্ধ পাইকারি বাজার মহাস্থান হাটে খেত থেকে তুলে আনা বেগুন কৃষক বিক্রি করেছেন ২৫ টাকা কেজি দরে। অথচ হাট থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে বগুড়া শহরে দুটি হাটে সেই বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। শুধু বেগুন নয়, লেবু, করলা, শসা, পটোলসহ অনেক সবজিই এখন পাইকারি আর খুচরা বাজারে দামের তারতম্য তিন থেকে চার গুণ।
- ট্যাগ:
- মতামত
- নিত্যপণ্যের দাম
- সড়কে চাঁদাবাজি