ঢাকা ও দিল্লির সম্পর্ক কেন প্রয়োজনীয়
বিদেশি রাষ্ট্রনায়করা সাধারণত ভারতে আসেন শীতকালে। সাইবেরিয়া থেকে ডিসেম্বর মাসে যেমন শীতের পাখিরা আসে; আবার উড়ে চলে যায় গরমকালে। অনেকটা সে রকম শীতকালটা শাহি দিল্লি কূটনীতির উষ্ণতায়। কিন্তু এবার এপ্রিল মাসে গরম পড়তে না পড়তেই দিল্লিতে রাষ্ট্রনায়কদের আসার ধুম পড়ে গেছে।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলেন। তারপর রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চলে এলেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী সবে ঘুরে গেলেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর আসার কথা ছিল। কিন্তু তাঁর কভিড হয়ে যাওয়ায় আসতে পারছেন না। পরে আসবেন বলেছেন। এমনকি যাঁকে নিয়ে এত অশান্তি ভারতের, সেই চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যন্ত পাকিস্তান-ভারত সফর করে কাঠমাণ্ডু চলে গেলেন।
কেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর? এটা নিয়ে সাউথ ব্লকের করিডরে বেশ জোরদার আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। আসলে যখন ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ চলছে আর সেই যুদ্ধ শুধু ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার মধ্যে সীমিত না থেকে একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা ন্যাটো সদস্যরা আর অন্যদিকে চীন, রাশিয়াসহ তাদের বেশ কিছু বন্ধুরাষ্ট্র মিলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটা নতুন ভারসাম্যের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছে। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলেন। যে সময় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলেন ঠিক তার পরপরই একেবারে মার্চ মাসের শেষে শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে হয়ে গেল বিমসটেকের পঞ্চম সম্মেলন। আর সেই সম্মেলনে শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বললেন শান্তির কথা, মৈত্রীর কথা। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং তার যে কোনো বিকল্প নেই, সে কথাও ঠিক এই সময়ে উঠে এলো নানা মঞ্চ থেকে। ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কটা এই উপমহাদেশে একটা অন্য মর্যাদা ও মাহাত্ম্য পেয়েছে। তার স্বীকারোক্তি যেমন এসেছে ভারতের কাছ থেকে, আবার একইভাবে এসেছে ঢাকার কাছ থেকে। এই সপ্তাহটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে একদিকে বিমসটেক, অন্যদিকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফরকে কেন্দ্র করে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতে এলেন দু-তিনটি কারণে, এমনটাই মনে করছে সাউথ ব্লক। প্রথমত, ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে রাশিয়াকে সঙ্গে নিয়ে চীন আমেরিকার সঙ্গে একটা সংঘাতের পথে গেছে। সংঘাত ও সমন্বয়—এই দুই-ই একসঙ্গে চলছে। যেমনটা কূটনীতিতে চলে। একদিকে সংঘাত আবার আরেক দিকে পরতে পরতে শান্তি প্রচেষ্টা। এ রকম একটা সময়ে ভারতে এসে জল মাপল চীন। ভারতের মানসিকতা, ভারতের মুড এবং ভারত কী ভাবছে, তা দেখে গেল। কভিডের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই রাষ্ট্রনায়কদের অনেক সফর বাতিল হয়েছে। অনেক বৈঠক ভার্চুয়ালি হয়েছে। এখন শুধু চীন নয়, ভারতে অনেক দেশ আসতে শুরু করেছে। তার কারণটা হচ্ছে, আসলে ইউরোপ ও পশ্চিমের বড় দেশগুলো শুধু ভারত নয়, বিভিন্ন দেশে সফর শুরু করেছে। আর এই এনগেজমেন্টের কারণটা হচ্ছে যে কভিডের পর বিভিন্ন প্রান্তে স্বাভাবিকতা ফিরে আসায় আবার নতুন করে বাজার তেজি হচ্ছে। আমি খোঁজ নিয়ে জানলাম, দিল্লির পাঁচতারা হোটেলগুলোতে বুকিং পাওয়া যাচ্ছে না। লন্ডন থেকে আমার এক বন্ধু এসেছিলেন। তিনি বলছিলেন, তাঁর যে কদিন বুকিং ছিল, তিনি মাত্র একটা দিন বাড়াতে চেয়েছিলেন; কিন্তু কিছুতেই সেই পাঁচতারা হোটেলে তিনি জায়গা পেলেন না। ফলে তাঁকে অন্য একটা হোটেলে এক দিনের জন্য শিফট হতে হলো।
- ট্যাগ:
- মতামত
- দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক