ক্রাচের কিশোর শিহাবের ‘মাল্টি কালার কষ্ট’
বসন্তের প্রথম দিন। সবাই সেজেছে নতুন সাজে। বিপুল প্রাণের স্পন্দনে মুখরিত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। কেউ নানা ঢঙে রঙিন মুহূর্তটাকে ছবিতে ধরে রাখতে ব্যস্ত, কেউবা ব্যস্ত ফুচকার স্বাদ পরখে। হঠাৎ চোখে পড়ল—ক্রাচে ভর দিয়ে এক পায়ে ‘অদম্য বাংলা’ ভাস্কর্যের দিকে এগিয়ে আসছে এক শিশু। হাতে তার লাল বালতি, মুখে কষ্টের ছাপ। ইশারায় কাছে ডাকতেই দেখা গেল বালতির মধ্যে সেদ্ধ করা ডিম।
সামান্য সময়ের আলাপে জানা গেল, সবাই তাকে শিহাব বলে ডাকে। খাতা-কলমে নাম তরিকুল ইসলাম। বয়স বছর দশেক হবে। মা নেই। থাকে নানির বাড়ি, ক্যাম্পাস থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরের জলমা ইউনিয়নের চরা এলাকায়। কৃষ্ণনগর বটতলার মোড় থেকে আর একটু সামনে চরা বটতলা। সেই মোড়ের দোকানে ময়নাদের বাড়ির কথা জিজ্ঞাস করলে সবাই চিনবে বলে জানাল শিহাব। একটা মুঠোফোন নম্বরও দিল। বিকেলের মরা রোদ যখন আরও ম্রিয়মাণ, তখনো গোটা পাঁচেক ডিম বিক্রি করা বাকি শিহাবের। কথা আর বাড়ল না। কথা রইল পরে আবার কথা হবে। শিহাব ভিড়ের মধ্যেই মিলিয়ে গেল।
কিছু সময় পর ক্যম্পাসে বেশ খানিকটা খোঁজাখুঁজির পরও শিহাবকে পাওয়া গেল না। সেই মুঠোফোন নম্বরে কয়েক দফা ফোন করলেও কোনো সাড়া নেই। অগত্যা শিহাবের খোঁজে সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কৃষ্ণনগরের চরার বটতলার সেই চায়ের দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই পাওয়া গেল ময়নাদের বাড়ি। এবড়োখোবড়ো ইটের সলিংয়ের পথ ধরে বাড়ির দিকে কিছু দূর এগোতে দেখা গেল ক্লান্ত শরীরে ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটছে শিহাব। আরও কিছুটা পথ এগিয়ে একটা ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে বলল। ওই ঘরের ভেতর থেকে ক্ষীণ আওয়াজ ভেসে এল, ‘ফিরিছিস! আজ যে ইট্টু তাড়াতাড়ি আসলি।’