‘অসাধারণের’ কাছে ‘সাধারণের’ প্রত্যাশা
প্রাচ্য-প্রতীচ্যের অনেক বড় বড় চিন্তাবিদ আবহমান কাল ধরে মনে করেন দুনিয়াটা দুই ভাগে বিভক্ত : দ্য হ্যাভস্ অ্যান্ড দ্য হ্যাভ নটস্—বিওশালী ও বিত্তহীন। সোজা কথায়, ধনী ও গরিব। কথাটির যথার্থতা প্রমাণের জন্য খুব একটা গবেষণার প্রয়োজন নেই। বস্তুজগতের চারপাশে চোখ মেলে চাইলেই বোঝা যায় কথাটি কত নির্মম সত্য।
আর এই সত্য মেনে নিয়েই যারা সমাজে পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর শ্রেণির মানুষ, তাদের আমরা ফেলে দেই ‘সাধারণ’ মানুষের ক্যাটাগরিতে। তাদের চিন্তা-চেতনা, চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষা তাদের বিপরীত শ্রেণির মানুষের চেয়ে সম্পূর্ণ না হলেও অনেকটাই ভিন্নধর্মী। ওই বিপরীত শ্রেণির মানুষকে আমাদের মতো পদে পদে বৈষম্যপূর্ণ দেশে বোধ হয় বলা যায় ‘অসাধারণ মানুষ’। কিন্তু পাছে তারা গোসসা হন সেই কারণে অসাধারণ মানুষ অভিধাটি এখনো ওই সব ঐশ্বর্য, ক্ষমতা এবং অশ্লীল রকম ধনী (ইংরেজি ফিলিদ রিচ কথাটির সরল বঙ্গানুবাদ) মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় না।
তবে হ্যাঁ, কখনো কখনো কিছু কিছু বিষয় সাধারণ-অসাধারণ উভয় শ্রেণির বেলায় সমভাবে প্রযোজ্য। যেমন—দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, করোনাজনিত সমস্যাবলি ইত্যাদি। তবে লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, সমস্যা যতই প্রকট হয়ে দেখা দিক না কেন সাধারণ-অসাধারণ দুই শ্রেণির মানুষের প্রতিক্রিয়া হয় দুই রকম। যেমন—চাল-ডাল-তেলের মূল্যবৃদ্ধিজনিত কারণে সাধারণ মানুষ মরিয়া হয়ে ওঠে ওগুলো ন্যায্য মূল্যে চাহিদামতো না হলেও যতটুকু সম্ভব সংগ্রহ করতে। তা টিসিবির গাড়ির পেছনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিয়েই হোক, আর কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে কিংবা গৃহিণীর মুখ ঝামটা সহ্য করেই হোক।
বিত্তশালীদের চিত্ত এসবে খুব একটা বিচলিত হয় না। আবার কোনো কোনো বিষয় জাতীয়ভাবে যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, ওগুলো যদি তাত্ক্ষণিকভাবে কোনো প্রয়োজন না মেটায়, তাহলে সাধারণ মানুষ সেটা নিয়ে বড় একটা গা করে না। কারণ সে জানে বিষয়টি নিয়ে গৃহিণী রা-টিও কাড়বে না, অফিস কামাই দিয়ে ওটার জন্য মিটিং-মিছিলেও শরিক হতে হবে না।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বৈষম্য
- সাধারণ জনগণ