উত্তরবঙ্গের সীমান্ত ঠাকুরগাঁওয়ের বর্গাচাষি সিরাজুল ইসলাম। নিজের সঞ্চয়, আত্মীয়স্বজনদের কাছে থেকে নেওয়া ধার ও এনজিওর ঋণ নিয়ে এ বছর আগাম আলুর আবাদ করেছিলেন। ছয় একর জমি আলুর আবাদে নিজের কয়েক মাসের পরিশ্রম বাদেও তাঁর খরচ হয়েছিল ছয় লাখ টাকা। কিন্তু আলু বিক্রি করতে গিয়ে তাঁর দীর্ঘশ্বাসের বোঝা ভারীই হচ্ছে। উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামও তিনি পাচ্ছেন না।
বাঙালির রান্নাঘর এখন শীতের সবজিতে ভরপুর। বাদামি খোসায় খেতের মাটি লেগে থাকা নতুন আলু শীতের সবজিকে উপাদেয় করে। আমরা যাঁরা নাগরিক ভোক্তা, তাঁরা বাজার থেকে এখন নতুন আলু কিনে ঘরে নিয়ে যাচ্ছি ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে। কিন্তু সিরাজুলকে কত টাকায় সেই আলু বিক্রি করে দিতে হচ্ছে বলতে পারেন? ৫ থেকে সাড়ে ৫ টাকা।
মুঠোফোনে কথা হচ্ছিল সিরাজুলের সঙ্গে। ক্ষীণ ও অনিশ্চিত কণ্ঠে তিনি বলে যাচ্ছিলেন তাঁর ‘নিয়তির গল্প’। গত বছরও তিনি আগাম আলু আবাদ করে লাভের মুখ দেখেছিলেন। জমি থেকেই আলু বিক্রি করতে পেরেছিলেন ৩৫ টাকায়। সে কারণে এবার আরেকটু বেশি জমিতে আলুর আবাদ করেছিলেন। ছয় একর জমি আলু আবাদের জন্য জমির মালিককে দিতে হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। আলুর বীজ, সেচ-কীটনাশক, বীজ বোনা, আলু ওঠানোর মজুরিসহ পরিচর্যা বাবদ বিঘাপ্রতি তাঁর খরচ হয়েছে ৪০-৪৫ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি আলুতে ২০-২২ হাজার টাকার বেশি দাম পাচ্ছেন না। প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ যেখানে ১২-১৩ টাকা, সেখানে অর্ধেক দামেই আলু বিক্রি করে দিতে হচ্ছে।