মহিব উল্লাহ হত্যাকাণ্ড বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়
সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তাই সময়ের কাজ সময়মতো না করলে তার খেসারত দিতে হয়। কথাটি ব্যক্তিজীবনে যেমন সত্য, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে এই সত্যের পরিধি ও পরিণতি হয় অনেক বড় ও বিস্তৃত। কোনো কিছুই হঠাৎ করে ঘটে না। একটা দীর্ঘ বা নাতিদীর্ঘ সময় নিয়ে প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে থাকে। কেউ সেটা টের পায়, আবার কেউ পায় না। আবার এক শ্রেণির মানুষ আছে, তারা দেখেশুনে অনেক কিছু উপেক্ষা করে। তাতে বিপদ যখন বড় হয়ে ওঠে, তখন তার প্রতিকারের পথ পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায়। দীর্ঘ সময়ের পর্যবেক্ষণের জায়গা থেকে আমার কাছে মনে হয়, বিগত সময়ে ঘটে যাওয়া অনেক কিছুকে উপেক্ষা করার কারণেই আমরা আজ রোহিঙ্গা সমস্যার প্রতিকারের পথ খুঁজে পাচ্ছি না। দিন দিন সব কিছু কঠিন ও জটিল হয়ে যাচ্ছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে কক্সবাজার ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপরিচিত রোহিঙ্গা নেতা মহিব উল্লাহ যেভাবে এবং যে প্রেক্ষাপটে নিহত হলেন তার জন্য বাংলাদেশকে অনেক খেসারত দিতে হতে পারে। আন্তর্জাতিক সব বড় মিডিয়ায় খবরটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে ছাপানো হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশে কর্মরত অন্য সব দেশের কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা। রোহিঙ্গা ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে থাকা ব্যক্তি ও সংগঠন কত বড় ঝুঁকির মধ্যে আছে, সেটাই মহিব উল্লাহ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেল। মহিব উল্লাহর একান্ত সহচর ও ভাতিজা রহিম এখন ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বলছেন, আরসা (ARSA-Arakan Rohingya Salvation Army) তাঁকে শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। মহিব উল্লাহ যে সংগঠনের নেতা ছিলেন সেই সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের পক্ষ থেকে রহিম একটা চিঠি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে। তাতে রহিম উল্লেখ করেছেন, হত্যাকারীরা প্রত্যাবাসন ও স্থানান্তরের বিরোধী। মহিব উল্লাহ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন এবং প্রচার চালাতেন, নিজ দেশ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরত যেতে হবে এবং তার জন্য শান্তিপূর্ণ পন্থা অবলম্বনই সর্বোত্তম উপায়; সংঘাত, সংঘর্ষ এবং সশস্ত্র বিদ্রোহ কোনো সমাধান দেবে না। ৩ অক্টোবর একটা নিউজ পোর্টালের খবরে দেখলাম, কিছুদিন আগে কিছু অডিও ক্লিপ ইউটিউবের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তাতে দেখা যায় সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার পক্ষ থেকে মহিব উল্লাহকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওই অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ার পর সব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটা ভীতিকর ও থমথমে অবস্থার সৃষ্টি হয়। অডিও ক্লিপে শোনা যায় অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি বলছেন, আরসা নেতা হাফেজ আতাউল্লাহর কথামতো না চললে মহিব উল্লাহর রক্তাক্ত মৃত্যু হবে। এই অডিও ক্লিপগুলো ছয় মাসের পুরনো বলে নিউজ পোর্টালের খবরে বলা হয়েছে। সুতরাং লেখার শুরুতে যে কথাটি বলেছি, তার সূত্রেই বলা যায় বহুদিন আগে থেকেই মহিব উল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তাই এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলার সুযোগ নেই।