অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘মন খোলে সমালোচনা’ করার আহ্বানে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়। গতকাল সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এই সময়ে পদ্মা-মেঘনায় অনেক জল গড়িয়েছে। ‘মন খোলে সমালোচনার’ কথাটি কথার কথা নাকি বাস্তবেও এর মিল আছে- সেটি গণমাধ্যম তো বটেই দেশের মানুষও প্রত্যক্ষ করেছে এর মধ্যেই। আসলে গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা।
ভলতেয়ারের সেই বিখ্যাত উক্তিও স্মরণযোগ্য- 'তোমার মতের সঙ্গে আমি একমত নাও হতে পারি কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের অধিকারের জন্য আমি জীবনও দিতে পারি।' - এই ধরনের একটি অঙ্গীকারই মানুষ সরকারের কাছ থেকে আশা করে। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে। কারণ এই সরকার একটি ‘ফ্যাসিবাদী’ শাসন ব্যবস্থা হটানোর পর ক্ষমতায় এসেছে। দেশের আমূল সংস্কারের কর্মসূচি তাদের হাতে। এমকি গণমাধ্যম সংস্কারেও কমিশন হয়েছে। সেই কমিশন আশা সঞ্চারী রিপোর্টও দিয়েছে।
দুই.
গাজীপুরে এক সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পত্রিকার মালিকদের সংগঠন ‘নোয়াব’ এক বিৃবতিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সরকার আবার সেই বিবৃতি প্রত্যাখান করে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে। এদিকে গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ, তীব্র নিন্দা জানিয়ে শোক প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। অন্য এক খবরে বলা হচ্ছে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়েই চলেছে।
এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের নানাভাবে নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে বলে বিবৃতি এসেছে গণমাধ্যমে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অপরাধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকাকে অ্যাকাডেমিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে।
তিন.
এসব বিষয়ে আলোচার আগে দেখা যাক গাজীপুরের ঘটনার বিস্তারিত। গাজীপুরে এক সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে। তাঁকে হত্যার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, আসাদুজ্জামান তুহিন থাকতেন গাজীপুর মহাগরীর চৌরাস্তা এলাকায়। পূর্বশত্রুতার জেরে পাঁচ-ছয়জন দুর্বৃত্ত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তাঁকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে। এ সময় তিনি দৌড়ে ঈদগাঁ মার্কেটের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন। পরে দুর্বৃত্তরা তাঁকে দোকানের ভেতরে ঢুকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। একপর্যায়ে তিনি মারা গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।